প্রতিজ্ঞা: কাজ শেষ না করা পর্যন্ত টয়লেটকে না, পানি খেতেও মানা!

কর্মক্ষেত্র মানেই কাজের চাপ! কোথাও কোথাও সেই চাপ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু তাই বলে কাজ শেষ না করা পর্যন্ত পানি না খাওয়া, টয়লেটে যেতে না দেওয়া রীতিমতো অমানবিকতার পর্যায়ে পড়ে। ভারতের হরিয়ানার মানেসারে ‘অ্যামাজন ইন্ডিয়া’র একটি গুদামের কর্মীদের সঙ্গে ঘটেছে এমনই ঘটনা। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

ভারতে আমাজনের বিশাল ব্যবসা

ওই প্রতিষ্ঠানের ২৪ বছর বয়সী এক কর্মীর বরাতে খবরে বলা হয়, গত ১৬ মে গুদামে ছয়টি ট্রাক আসে। সেই ট্রাক থেকে তারা পণ্য নামাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের প্রতিজ্ঞা করানো হয়, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা টয়লেটে যাওয়া যাবে না। পানি খেয়েও তারা সময় নষ্ট করতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, গত মাসে অন্তত আটবার তাদেরকে এমন প্রতিজ্ঞা করানো হয়েছে। বিশেষ করে কাজের চাপ বেড়ে গেলেই তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়। গুদামের অন্য বিভাগের লোকজনের সঙ্গে এমন আচরণ তুলনামূলক কম করা হয়। কিন্তু একেবারেই করা হয় না, তা নয়।

২৪ বছর বয়সী ওই কর্মী আমাজনের গুদামের এমন ভয়াবহ কর্মপরিবেশের বিস্তারিত বর্ণনা করে বলেন, আমি ১০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে সপ্তাহে পাঁচদিন, দৈনিক ১০ ঘণ্টা করে কাজ করি। কয়েকদিন আগে আমাদের প্রতিজ্ঞা করানো হয়, আমরা যেন টয়লেটে যাওয়া ও পানি খাওয়ার কথা ভুলে যাই। তাহলে আমরা পারফরম্যান্স বৃদ্ধি এবং লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।

ওই কর্মী দাবি করেন, কেবল প্রতিজ্ঞা করিয়েই কর্মকর্তারা ক্ষ্যান্ত দেন না, তারা টয়লেটেও গিয়ে চেক করেন, কেউ বেশি সময় নষ্ট করছে কি না। এসবের কারণে নারী কর্মীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয় জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মী বলেন, বাইরে থাকা মালামালের ট্রাকগুলো আনলোড করতে প্রচণ্ড ঘাম হয়। এর মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। ফলে ওই নারীরা দুর্বল হয়ে পড়েন।

এক কর্মী অ্যামাজনের উপস্থিতি বিষয়ক কঠোর নীতিরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, যদি আমরা স্বাস্থ্যগত কারণে বা পারিবারিক জরুরি কোনো কারণে একটি দিন মিস করি, তাহলে আমাদের আইডি ব্লক করে দেওয়া হয়, যা পরবর্তী সময়ে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে।

হরিয়ানার মানেসারের অ্যাসোসিয়েশনের নেতা মঞ্জু গোয়েল বলেন, এই অঞ্চলের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। অ্যামাজনের গুদামগুলোর অবস্থা আরও কঠিন। কারণ এসব গুদামে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই, এয়ারকন্ডিশনারও নেই। এমন পরিবেশেই প্রায় দুই হাজার কর্মী কাজ করেন, যারা প্রতিদিন নিপীড়নমূলক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন।

কর্মীদের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণের ব্যাপারে সংস্থাটির এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের নীতিমালায় এমন কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। তারপরও যদি কেউ এমন কোনো আচরণ করেন, তাহলে এটি সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হবে।