যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে ‘ফাঁদে’ পড়েছেন নেতানিয়াহু!

শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে হামাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক হামলা শুরু করেছিল ইসরায়েল। তবে দীর্ঘ আট মাসেও বাগে আনতে পারেনি হামাসকে। উপরন্তু যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে পরিষ্কারভাবে ফাঁদে পড়ে গেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। খবর আল জাজিরা।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

গত বছরের অক্টোবরে যে তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইসরায়েল গাজায় হামলা শুরু করেছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, গাজা থেকে হামাসকে নির্মূল করা এবং হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের উদ্ধার করা। কিন্তু দীর্ঘ আট মাস সময় পার হলেও এতে বলার মতো সাফল্য পায়নি ইসরায়েল। এ পর্যন্ত তাদের হামলায় প্রায় ৩৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হলেও তাদের মধ্যে সিংহভাগই ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিক। বরং হামাস তার শক্তি দেখাতে কয়েকদিন আগেই ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রকেট হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে বন্দী বা জিম্মি মুক্তির বেলাতেও বলার মতো কোনো সাফল্যই নেই ইসরায়েলি বাহিনীর।

এ অবস্থায় চলমান সংঘাতে যুদ্ধবিরতির দাবি উঠছে বিশ্বজুড়েই। এমনকি ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা পেশ করেছে। গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তিনি প্রস্তাবটি দিয়েছেন। হামাসকে তিনি প্রস্তাবটি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন জো বাইডেন

বাইডেনের প্রস্তাব বিশ্বের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি হামাস এবং ইসরায়েলের বিরোধী দলগুলোও স্বাগত জানায়। কিন্তু খোদ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুই তা প্রত্যাখ্যান করে বসেন। তিনি বলেন, গাজা থেকে হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল না করা পর্যন্ত তারা যুদ্ধ বন্ধ করবেন না। এমনকি তার মন্ত্রিসভার দুই সদস্য ঘোষণা দেন, যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া হলে তারা পদত্যাগ করবেন।

এ অবস্থায় নেতানিয়াহু পরিষ্কারভাবে ফাঁদে পড়ে গেছেন বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক লুসিয়ানো জাক্কারা বলেন, একদিকে জিম্মিদের পরিবার ও সাধারণ ইসরায়েলিরা নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হতে চাপ দিচ্ছেন। অন্যদিকে তার জোট সরকারের দুই উগ্রপন্থী মন্ত্রী পদত্যাগের হুমকি দিয়ে বলছেন, নেতানিয়াহু এ প্রস্তাব মেনে নিলে তারা সরকার ভেঙে দেবেন।

এমনিতেই বর্তমানে নেতানিয়াহুর জোট সরকারের অবস্থান খুবই নড়বড়ে। সেটি ভেঙে গেলে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারই হুমকির মুখে পড়ে যাবে। আবার যুদ্ধ বন্ধ হলে নতুন নির্বাচনের দাবি উঠবে দেশটিতে। ফলে বাইডেনের প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক নিয়ে খতিয়ে দেখতে হচ্ছে তাকে।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়েছে ইসরায়েল। যুদ্ধ দীর্ঘ হলে ক্ষতির তালিকাও দীর্ঘ হবে। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে অনেক দেশই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এটিও ইসরায়েলের জন্য একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। সব মিলিয়ে বড় ধরনের চাপ ও ফাঁদের মুখে পড়ে গেছেন নেতানিয়াহু!