মুশফিক- মিরাজের দৃঢ়তায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ

ফলোঅন এড়াতেই এখনো দরকার অন্তত ১৬৬ রান। হাতে আছে চার উইকেট। এ অবস্থায় ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ কথাটা কি বলা যায়? হয়তো যায় না। তারপরও বলতেই হচ্ছে। কারণ তৃতীয় দিনে প্রথম সেশনে দ্রুত তিনটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের তো আজই দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নামার শঙ্কা দেখা দিয়েছিলো। সেটা না হওয়ার কারণেই ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ বলাটাকে তেমন ‘অপপ্রয়োগ’ মনে হচ্ছে না।

সপ্তম উইকেট জুটিতে মুশফিক- মিরাজের ৮৭ রান বাংলাদেশকে দিয়েছে দারুণ স্বস্তি। স্বস্তিটা অবশ্য রানের কারণে নয়। বরং এ দুজনের এক বল কম ৩৩ ওভার খেলার কারণে।

মিরাজ নেমে পড়েছেন, মানে হলো, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের লেজটা বেরিয়েই গেছে। বাকি যে কজন আছে, লেজের সেই শেষ অংশটুকু ছেঁটে দিতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয় ভারতীয়দের। ফলে মুশফিক- মিরাজের প্রায় ৩৩ ওভারের দৃঢ়তার তাৎপর্য অনেক বেশি।

দিনের শুরুতে উমেশ যাদব পেস বোলিংয়ের যে সৌন্দর্য মেলে ধরেছিলেন, দিনভরই তার দারুণ প্রদর্শনী দেখা গেছে। এর মধ্যেই ঝলক দেখিয়ে গেছেন সাকিব আল হাসান। ১০৩ বলে ৮২ রান করার হঠাৎই মনোযোগ হারিয়ে, লুজ শট খেলে আউট না হলে, তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে আরো কিছু রান নিশ্চিতভাবেই থাকতো। তখন হয়তো ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র ব্যাপারটা প্রতিষ্ঠিত হতো আরো যৌক্তিকভাবে।

৬৮৭ রানের পাহাড় ডিঙাতে বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিলো তামিম ইকবালের ব্যাটের দিকে। তিনি তাকিয়ে থাকার প্রতিদান দিবেন, এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছিলো। কিন্তু তৃতীয় দিন সকালেই মুমিনুলের সঙ্গে ভজঘট পাকিয়ে তিনি পড়লেন রানআউটের ফাঁদে। কিছুক্ষণ পর মুমিনুল ফেরেন উমেশের রিসার্ভ সামলাতে না পেরে, এলবিডব্লিউ হয়ে।

মুমিনুল ২৫ রানে কম করে আউট হওয়ার ফলে ১৫ বছরের পুরোনো এক দুর্বলতা আবার উঁকি দিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে। টেস্টে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের সবাই দুই অংক ছুঁয়েছেন, কিন্তু কেউ অন্তত ২৫ করতে পারেননি; এমন দৃশ্য বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে দেখা গিয়েছিলো ২০০২ সালে, পাকিস্তানের বিপক্ষে। সময়ের ডানায় চড়ে সেই দৃশ্য আবার ফিরলো বাংলাদেশে ব্যাটিংয়ে।

৬৪ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলার পরই, কতোদ্রুত বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হবে, সেই চিন্তাভাবনা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু সাকিব- মুশফিকের ১০৭ রানের জুটিতে কিছুটা প্রতিরোধের মুখে পড়ে ভারত। তার আগে ২৮ রানের একটা ইনিংস খেলে যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

সাকিব- মুশফিকের প্রতিরোধটা ভাঙেন ভারতের এক নম্বর বোলার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তার টার্ন করা বল সাকিবের মিস-শট হয়ে যায় মিড অনে। সহজ ক্যাচ উঠে উমেশের সামনে। সেটা ধরতে তেমন কোনো কষ্টই করতে হয়নি তার।

সাকিব চলে যাওয়ার পর সাব্বির এসে করে যান মাত্র ১৬ রান। এরপর মুশফিকের সঙ্গে জুটি গড়েন মিরাজ। অনূর্ধ্ব- ১৯ পর্যায়ের তুখোড় অলরাউন্ডার জাতীয় দলে এসে বোলিংয়ের বাইরে নিজের অন্য কোনো পরিচয় মেলে ধরতে পারেননি। ব্যাট হাতে বারবার দলকে হতাশ করার পর আজ তিনি পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক হাফ সেঞ্চুরি।

একদিকে তার হাফ সেঞ্চুরি, অন্য দিকে মুশফিকের অধিনায়কোচিত দৃঢ়তা; এই দুই মিলে সপ্তম উইকেটে গড়ে উঠেছে ৮৭ রানের জুটি। সেটাও এক বল কম ৩৩ ওভারের। এই জুটি আগামীকাল বাংলাদেশকে কতো দূরে নিয়ে যেতে পারে, তার উপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের ফলোঅনে পড়া- না পড়া।

হায়দরাবাদের যা উইকেট, চতুর্থ দিনে স্পিন সেখানে সাপের মতোই ছোবল মারবে। এমন ভবিষ্যৎবাণী শোনা যাচ্ছে। সেটা হলে কাল কঠিন এক পরীক্ষায়ই নামতে হবে বাংলাদেশকে। সেই পরীক্ষা উতড়াতে চাইলে মুশফিক- মিরাজকে দিতে আরো অনেক অনেক গুণ কঠিন দৃঢ়তার পরিচয়। তারপর হয়তো ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র ব্যাপারটা আরো যৌক্তিক ভিত্তি পাবে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত প্রথম ইনিংস: ৬৮৭/৬ ডিক্লেয়ার, বিরাট ২০৪, মুরালি বিজয় ১০৮; তাইজুল ৩/১৫৬
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩২২/৬, মুশফিক ৮১*, সাকিব ৮২, মেহেদি ৫১*; উমেশ ২/৭২