ফের রিয়াল রূপকথা, সিটির পরিণতি বায়ার্নের

ঠিক যেন দুই বছর আগের সেমিফাইনাল। এবার ম্যানচেস্টার সিটির পরিবর্তে প্রতিপক্ষ বায়ার্ন মিউনিখ। সেদিন জোড়া গোল করে রূপকথার জয় এনে দিয়েছিলেন রদ্রিগো গৌজ। এবার তার পদাঙ্ক অনুকরণ করলেন হোসেলু। বিজয়ী দলটার নাম সেই একই। রিয়াল মাদ্রিদ! আর ভেন্যু? হ্যাঁ, চিরচেনা সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। এই দুর্গ প্রতিপক্ষের মৃত্যুকূপ। যেটির কৃষ্ণগহ্বরে সিটির মতো হারিয়ে গেল বায়ার্নের স্বপ্নটাও।

রিয়াল মাদ্রিদের রূপকথার জয়ের নায়ক হোসেলুর উল্লাস। ছবি: এক্স

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের ডেরায় রিয়াল মাদ্রিদ এমনই। ইউরোপের মঞ্চে আরও একবার প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখল কার্লো আনচেলত্তির দল। বুধবার রাতে বায়ার্ন মিউনিখকে ২-১ গোলে হারিয়ে স্প্যানিশ জায়ান্টরা উঠে গেল ফাইনালে। আগামী ১ জুন লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ। যেখানে তাদের অপেক্ষায় আছে জার্মানির আরেক ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ড।

অ্যালিয়েঞ্জ এরিনায় শেষ চারের প্রথম লেগেও রোমাঞ্চকর লড়াই উপহার দিয়েছে বায়ার্ন-রিয়াল। সেদিন চার গোলের থ্রিলার ম্যাচে ড্র করে দুই দল (২-২)। ফিরতি লেগে রিয়ালকে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হলো। ‘পরীক্ষক’ হয়ে উঠেছিলেন খোদ বায়ার্ন অধিনায়ক ম্যানুয়েল ন্যুয়ার। তিন কাঠির নিচে মহাপ্রাচীর গড়ে রিয়ালের নির্যাস শুষে নিচ্ছিলেন জার্মান অধিনায়ক। সঙ্গে গোলপোস্টের বেরসিক আচরণ। রিয়াল পড়ে যায় অস্বস্তিতে।

পুরো ম্যাচে অতিমানবীয় পারফর্ম করা ন্যুয়ার একটা ভুলই করেছেন। সেটিই কাজে লাগিয়েছে রিয়াল। জার্মান তারকা বল গ্রিপ করতে পারেননি। বল তার হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। গোলমুখের সামনে ওঁৎ পেতে থাকা হোসেলু মুহূর্তেই শট নেন। বল খুঁজে নেয় স্প্যানিশ ফরওয়ার্ডের স্বপ্নের ঠিকানা। যিনি ৮১ মিনিটে এসেছিলেন বেঞ্চ ছেড়ে। প্রথম গোলের দুই মিনিট পর আবারও দৃশ্যপটে এলেন হোসেলু।

এবার অ্যান্তনি রুদিগারের স্কয়ার পাস থেকে জয়সূচক গোল। কিন্তু বার্নাব্যুর উদযাপন শুরুতেই থমকে যায় অফসাইডের বাঁশিতে। পরে ভিএআর দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টান রেফারি। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে বার্নাব্যু। খ্যাপাটে উদযাপনে মেতে ওঠেন রিয়াল ফুটবলাররা। দুই বছর আগে ঠিক এই মঞ্চেই এমন বুনো উল্লাস করেছিলেন তারা। সেদিন ৮৯ মিনিট পর্যন্ত এক গোলে (দুই লেগ মিলিয়ে দুই গোলে) পিছিয়ে ছিল রিয়াল।

বায়ার্নের বিপক্ষেও ৮৭ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে ছিল রিয়াল। স্বপ্ন ভেঙে দিতে ওই একটা গোলই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ যে ‘মিরাকল’ ক্লাব। সেটি আরও একবার প্রমাণ করল আনচেলত্তির দল। কেন রিয়াল চ্যাম্পিয়নস লিগের রাজা সেটি আরও একটা উদাহরণ তৈরি করল তারা। জাদুকরি জয় এনে দেওয়া হোসেলু আনন্দে কেঁদেই ফেললেন।

মহারণের প্রথমার্ধ কেটেছে গোলখরায়। এ সময় কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করেও ব্যর্থ হয়েছে রিয়াল। বায়ার্নও গোলের সুযোগ পেয়েছিল। আন্দ্রে লুনিনের দুর্দান্ত ফর্ম তাদের বঞ্চিত করে। অবশেষে ৬৮ মিনিটে খোলে গোলমুখ। ডি-বক্সের ভেতরে কোনোকুনি শটে আলফানসো ডেভিস পরাস্ত করেন লুনিনকে। স্তব্ধ হয়ে যায় বার্নাব্যু। উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে বায়ার্ন মিউনিখ।

বাভারিয়ানদের উৎসবের রেশ কেটে গেছে হোসেলুর প্রথম গোলেই। অবশ্য রিয়াল সমতায় ফিরতে পারতো আরও কয়েক মিনিট আগে। কিন্তু গোলের আগ মুহূর্তে রিয়াল ডিফেন্ডার ফাউল করলে ভিএআরের সহায়তায় গোল বাতিল করেন রেফারি। কিন্তু মনোবল ভাঙেনি রিয়াল খেলোয়াড়দের। মুহুর্মুহু আক্রমণে কাঁপিয়ে দেয় বায়ার্নের রক্ষণদুর্গ।

দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের শেষ দিকে বায়ার্নও দ্বিতীয় গোলের দেখা পেয়েছিল। কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় গোল। এ সময় দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়। রেফারি উত্তেজনার পারদে জল ঢেলে দেন। ততক্ষণে উৎসব শুরু হয়ে গেছে মাদ্রিদজুড়ে। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলের জয়ে ফাইনালে উঠে যায় রিয়াল। তাদের হাতছানি দিচ্ছে প্রতিযোগিতার ১৫তম (সর্বোচ্চ) ট্রফি।