বিক্ষোভে ফুঁসছেন পাকিস্তানে হাজার হাজার কৃষক!

পাকিস্তানের কয়েক হাজার কৃষক তাদের গম না কেনার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ করছেন। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলে তারা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ করছেন।

ছবি - সংগৃহীত

পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ এবং দেশটির ‘রুটির ঝুড়ি’ খ্যাত পাঞ্জাবের কৃষকরা সরকারকে গম আমদানি বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, সরকার এমন সময়ে গম আমদানি করে বাজার ছেয়ে ফেলেছে, যখন দেশেই গমের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।

আল জাজিরা জানিয়েছে, কৃষকদের চলমান বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের খবরও পাওয়া গেছে। সোমবার পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে বিক্ষোভে পুলিশ সহিংসভাবে কৃষকদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে। কয়েক ডজন কৃষককে তারা গ্রেপ্তার করে।

গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এবং চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে গম আমদানির কারণে বাজারে অতিরিক্ত গম রয়ে গেছে। যে কারণে স্থানীয়ভাবে গমের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

পাকিস্তানের আয়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য খাত হলো কৃষি। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ২৩ শতাংশই আসে এই খাত থেকে, যেখানে গম থেকে আসে ২ শতাংশ।
২০২২ সালে পাকিস্তানে বিধ্বংসী বন্যায় গম চাষের ওপর প্রভাব পড়ে। ২০২৩ সালের প্রথম দিকে গমের ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। পাকিস্তান যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন গম ব্যবহার করে, সেখানে ২০২২ সালে মাত্র ২৬.২ মিলিয়ন টন উৎপাদন হয়েছিল। এর ফলে দাম বেড়ে যায় এবং গম কেনার জন্য শহরগুলোতে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। এমনকি গম কিনতে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে পড়ে পিষ্ট হওয়ার ঘটনাও ঘটে।

সেই সময়ে ক্ষমতাসীন জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) সরকার তার মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র এক মাস আগে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বেসরকারি খাতকে গম আমদানি করার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৪ এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পাকিস্তানে ৩.৫ মিলিয়ন টনেরও বেশি গম আমদানি করা হয়, যেখানে দাম ছিল অনেক কম।

আর এই বছরের এপ্রিলের শুরুতে যখন পাকিস্তানের কৃষকরা তাদের গম কাটা শুরু করেন, তখন জাতীয় ও প্রাদেশিক খাদ্য গুদামজাতকরণ বিভাগ ৪.৩ মিলিয়ন টনেরও বেশি গম মজুদ করে।

সরকার সাধারণত স্থানীয় কৃষকদের উত্পাদিত মোট গমের প্রায় ২০ শতাংশ একটি নির্দিষ্ট মূল্যে কিনে থাকে। ২০২৩ সালে মোট উৎপাদিত ২৮ মিলিয়ন টম থেকে সরকার কেনে ৫.৬ মিলিয়ন টন। বাজারে সরকারের এই হস্তক্ষেপে দামের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত, মজুদ রোধ এবং সরবরাহ চেইন বজায় থাকে। কিন্তু এ বছর পাকিস্তানি কৃষকদের কাছ থেকে মাত্র ২ মিলিয়ন টন গম কেনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। যে কারণে তারা বিক্ষোভ করে আসছে।