জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব, এশিয়ার ছয় দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অস্বাভাবিক তীব্র গরমের প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। তীব্র গরমের কারণে ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত ও বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশে স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। রোববার এই অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে।

ছবি - সংগৃহীত

ফিলিপাইনে রাজধানী ম্যানিলার তাপমাত্রা রেকর্ড ভেঙে ৩৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। আর্দ্রতার প্রভাব যুক্ত করে তাপমাত্রার অনুভূতি ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। এর ফলে সরকার দেশজুড়ে সকল সরকারি স্কুলে দুই দিনের জন্য সরাসরি উপস্থিতিতে ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করেছে।

গরমের প্রকোপ অব্যাহত থাকায় অধিকাংশ মানুষ আরামের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিংমল ও সুইমিং পুলে ভিড় জমাচ্ছেন। ৬৫ বছর বয়সী একটি রিসোর্টের মালিক ন্যান্সি বাউটিস্টা বলেন, ‘আমার জীবনে এমন গরম আর কখনো অনুভব করিনি। আমাদের অতিথিদের বেশিরভাগ পরিবার নিয়ে এসেছেন। গরম থেকে বাঁচতে সবাই পুলে সাঁতার কাটছেন।’

শনিবার ম্যানিলার উত্তরে টারলাক প্রদেশের ক্যামিলিংয়ে সর্বোচ্চ ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তীব্র গরমের কারণে ম্যানিলার কাছেই থাকা জেরিস রেয়েস তার দুই বছর বয়সী মেয়েকে শপিংমলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে ঘরে খুবই গরম। বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গরম সহ্য করা যায় না। বিদ্যুৎ বিল বাঁচানোর জন্য বিনামূল্যে শীতাতপ ব্যবহারের সুযোগ থাকলে খুবই ভালো হতো।’

থাইল্যান্ডে তাপপ্রবাহে এ বছর পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির উত্তর প্রদেশে তাপমাত্রা ৪৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ায় 'গুরুতর পরিস্থিতির' সৃষ্টি হয়েছে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া দপ্তর।

মিয়ানমারে ইয়াঙ্গুন শহরে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে সতর্ক করেছে দেশটির জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর।

মিয়ানমারের ইয়াঙ্গনে কাজ করা ৩৯ বছর বয়সী এক ক্যাশিয়ার, সান ইন বলেন, ‘আমি দিনের বেলা বাইরে যেতে সাহস করি না। আমি চিন্তিত- আমরা তাপাঘাতে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারি।’

তিনি আরও বলেন যে, চতুর্থতলার অ্যাপার্টমেন্টে থাকার ফলে যে অসহ্য গরম হয়, তা এড়াতে তিনি রাতে স্বামী ও চার বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে পার্কে যান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় গরমের হাত থেকে বাঁচার এটাই একমাত্র জায়গা।’

মিয়ানমারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষকরা গত সপ্তাহে জানিয়েছেন যে দেশটিতে এপ্রিল মাসের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ৩-৪ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

রোববার, দেশটির জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক করে জানিয়েছে, মান্দালয় শহরে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলিসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

কম্বোডিয়ায় আগামী সপ্তাহে দেশটির কিছু অংশে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করেছে দেশটির আবহাওয়া মন্ত্রণালয়।

ভিয়েতনামে পাঁচ দিনের জাতীয় ছুটির সময় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

ভারতে বেশ কয়েকটি রাজ্যে তীব্র তাপপ্রবাহের অবস্থা চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

বেঙ্গালুরু থেকে ৩৭ বছর বয়সী বিজ্ঞাপন পেশাদার অনন্ত নাডিগের এএফপিকে বলেন, ‘আমি এর আগে কখনো এমন গরম অনুভব করিনি, এটা খুবই অপ্রীতিকর এবং এটি আপনার শক্তি কেড়ে নেয়।’

তীব্র গরমে লাইনে দাঁড়িয়ে লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। ভারতের নির্বাচন কমিশরে পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভোটদানের প্রতিটি পর্বে গরমের প্রভাব পর্যালোচনা করার জন্য তারা একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে রোববার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় আজ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বাংলাদেশে গত ২৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আবহাওয়াবিদেরা আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।

গত বছর বৈশ্বিক তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আবহাওয়া ও জলবায়ু সংস্থা। তাদের মতে, বিশেষ করে এশিয়া অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার বেশ বেশি।

ব্যাপক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপপ্রবাহ আরও দীর্ঘস্থায়ী, ঘন ঘন এবং আরও তীব্র হতে চলেছে।

এদিকে আবহাওয়াবিদেরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, এপ্রিল মাসের শেষ পর্যন্ত এই অস্বস্তিকর গরম অব্যাহত থাকবে। মে মাস থেকে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে পারে।