গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ: যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গ্রেপ্তার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছেন। কলম্বিয়া ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা গ্রেপ্তারেরও শিকার হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও থামাতে পারছে না এই বিক্ষোভ।

ছবি - সংগৃহীত

ফিলিস্তিনপন্থী শত শত বিক্ষোভকারী বর্তমানে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তাঁবু তৈরি করে অবস্থান করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের এই তাঁবু থেকে সরে যাওয়ার আদেশ দিলেও তারা স্থান ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অপরদিকে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার একটি কলেজ ক্যাম্পাসের দুটি ভবনের ভিতরে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী দুই দিন ধরে অবস্থান করছেন।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে তীব্রভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এর ফলে অনুপ্রবেশ বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের অভিযোগে ইতোমধ্যেই কয়েক ডজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। 

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মিনোচে শফিক একটি বিবৃতিতে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের তাঁবু ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এর জন্য একটি সময়সীমাও নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এর মধ্যে বিক্ষোভকারীরা স্থান ত্যাগ না করলে আমরা বিকল্প ব্যবস্থাগুলো বিবেচনা করে দেখব।  

তবে সেই সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরেও বিক্ষোভকারীদের তাদের ক্যাম্পেই অবস্থান করতে দেখা গেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, কিছু বিক্ষোভকারী তাদের তাঁবু নামিয়ে নিচ্ছেন এবং অন্যরা দ্বিগুণ উৎসাহের সঙ্গে বক্তৃতা দিচ্ছেন।

সম্প্রতি মার্কিন স্পিকার মাইক জনসন কলম্বিয়া সফর করে ইহুদি ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতে চান। তিনি ইহুদি বিদ্বেষ মোকাবেলায় কলেজ ক্যাম্পাসে বক্তৃতাও দিতে চান। এরপর থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। 

ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির বিক্ষোভকারীরা ২২ এপ্রিল, সোমবার সন্ধ্যায় ভবনের প্রবেশপথ অবরোধ করতে আসবাবপত্র, তাঁবু, চেইন এবং জিপ টাই ব্যবহার করতে শুরু করেন। সান ফ্রান্সিসকো থেকে প্রায় ৩০০ মাইল উত্তরে ক্যালিফোর্নিয়ার রক্ষণশীল অঞ্চলে এ ধরনের বিক্ষোভ অনাকাংখিত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তিন জন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৪ এপ্রিল, বুধবার পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ২৩ এপ্রিল, মঙ্গলবার অজ্ঞাত সংখ্যক শিক্ষার্থী দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ভবন দখল করেন।  

মূলত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে কয়েক মাস ধরেই বিক্ষোভ চলছিল। তবে গত সপ্তাহে ফিলিস্তিনিপন্থী শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করার পরে এই বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করে। 

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ১৩৩ জন বিক্ষোভকারীকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং সবাইকে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের অভিযোগে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কানেকটিকাটে ইয়েল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের কেন্দ্রে থেকে চলে যেতে অস্বীকৃতি জানানোয় ৬০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ৪৭ জন শিক্ষার্থী ছিলেন।

ইয়েলের প্রেসিডেন্ট পিটার স্যালোভি বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ শেষ করার এবং ট্রাস্টিদের সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি আর নিরাপদ নয় বলে ঠিক করার পর পুলিশ এসে ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ৬ মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু।

সূত্র: দ্য নিউ আরব