ভারতে ‘সাইবার ক্রীতদাস’ আতঙ্ক

ভারতে বেকারত্বের হার বৃদ্ধির সুযোগে আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র 'সাইবার ক্রীতদাস' তৈরির নতুন ফাঁদ বিছিয়েছে। দামি চাকরির প্রলোভনে ভারতীয়দের কম্বোডিয়ায় নিয়ে জোর করে সাইবার প্রতারণার কাজে লাগানো হচ্ছে। সম্প্রতি ভারত সরকার কম্বোডিয়া থেকে কিছু ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করলেও, এখনও অনেকে ওই অবস্থায় আটকা পড়ে আছে। খবর এবিপি।

কম্বোডিয়া ও ভারতের পতাকা

খবরে জানা গেছে, মোটা বেতনের চাকরির টোপ দিয়ে প্রতারক চক্র ভারতীয় নাগরিকদের কম্বোডিয়ায় নিয়ে যায়। এরপর জোর করে তাদের বিভিন্ন ধরনের সাইবার প্রতারণার কাজে যুক্ত করা হয়। প্রতারক চক্রের সদস্যরা  শুরুতেই পাসপোর্ট নিয়ে নেয়, যার ফলে ইচ্ছে করলেও তারা প্রতারকদের ফাঁদ থেকে বের হতে পারে না। সেই সঙ্গে নানা ধরনের অত্যাচার তো রয়েছেই।

ভুক্তভোগীরা জানান, যোগ্যতা তেমন না থাকলেও ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লোকজনকে পর্যটন ভিসায় কম্বোডিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর চাকরি দেওয়ার কথা বলে পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। এরপরেই দেখা মেলে আসল চেহারার। তাদের বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ করতে বাধ্য করা হয়।

তারা আরও জানান, কম্বোডিয়ায় তাদের ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে দেওয়া হয়। মেয়েদের নাম ও ছবি দিয়ে তৈরি সেই প্রোফাইল ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন প্রতারণামূলক কাজ করতে বাধ্য হতেন। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা বাধ্যতামূলক কাজ করতে হতো। তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করতে পারলে অত্যাচারের সীমা থাকতো না। কোনো ছুটিছাটার বালাই নেই। উল্টো বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাদের খাবার বন্ধ করে দেওয়া হতো।

সম্প্রতি বিষয়টি ভারত সরকারের নজরে পড়লে ভুক্তভোগীদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করে দিল্লি। কম্বোডিয়া প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ২৫০ জনকে উদ্ধার করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ কাজে তাদের সহায়তা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ভারতীয় সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টারসহ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

তবে আরও কয়েক হাজার ভারতীয় একইভাবে আটকা পড়ে আছে বলে জানা গেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, সাহায্যপ্রার্থী সকল ভারতীয় নাগরিককে সাহায্য করার জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

কিছুদিন আগে বিদেশে ভালো চাকরির টোপ দিয়ে লোকজনকে রাশিয়াতে নিয়ে যুদ্ধে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইও ঘটনার তদন্তে নেমেছে।