ফিলিস্তিনের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোস্তফা

যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মোহাম্মদ মোস্তফাকে নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়েহের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন মোস্তফা, যিনি অধিকৃত পশ্চিমতীরে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধের কারণে গত ফেব্রুয়ারির শেষদিকে পদত্যাগ করেছিলেন। খবর আল জাজিরা।

মাহমুদ আব্বাস ও মোহাম্মদ মোস্তফা 

৭০ বছর বয়সী মোহাম্মদ মোস্তফা সর্বশেষ প্যালেস্টাইন ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি ২০১৩-১৫ সাল মেয়াদে উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় অর্থনীতি বিষয়কমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনকারী মোস্তফা বিশ্বব্যাংকে ১৫ বছর কাজ করেছেন।

ফিলিস্তিনের একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য মোহাম্মদ মোস্তফার হাতে কয়েক সপ্তাহ সময় থাকবে। সে সময় পর্যন্ত অবশ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়েহ দায়িত্ব পালন করবেন।

পাঁচ মাসের হামলায় বিধ্বস্ত গাজা

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার সময় মোহাম্মদ শতায়েহ বলেন, গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসন এবং পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে সহিংসতা বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমি পদত্যাগ করছি। কারণ গাজার পরিস্থিতি এখন আর আগের মতো নেই। সেখানে নতুন এক বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে। আর সেক্ষেত্রে ফিলিস্তিনের অখণ্ডতা ও ঐক্য ধরে রাখতে নতুন সরকার প্রয়োজন, যারা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, পুরো ফিলিস্তিনের ঐক্য আরও দৃঢ় করতে পারবে। আমি মূলত এ কারণেই পদত্যাগ করেছি।

ওয়াশিংটনের যুদ্ধোত্তর দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কারের জন্য মার্কিন চাপের মুখে মাহমুদ আব্বাস মোহাম্মদ মোস্তফাকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। ফিলিস্তিনের নতুন একটি সরকার গঠন করাই এখন মোহাম্মদ মোস্তফার মূল কাজ।

বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা যুদ্ধোত্তর গাজাসহ পুরো ফিলিস্তিনকে সাহায্য করার জন্য এ অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ পিএ’র অধীনে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে ইসরায়েলও হামাসকে গাজার শাসনব্যবস্থা থেকে উৎখাত করতে উন্মুখ। এমন প্রেক্ষাপটে মোহাম্মদ মোস্তফাকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ কয়েকদিন আগে জানিয়েছে, তারা এমন কোনো ফিলিস্তিনি সরকারকে কখনোই সহযোগিতা করবে না, যারা হামাস এবং তাদের ৭ অক্টোবরের দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলাকে প্রত্যাখ্যান করতে অস্বীকার করে। মোহাম্মদ মোস্তফা তার ভাষণে ৭ অক্টোবরের হামলাকে ‘সকলের জন্য দুর্ভাগ্যজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি এ-ও বলেছেন, এটি সেই সমস্যারই একটি প্রভাব, যাতে ফিলিস্তিনি জনগণ্য গত ৭৫ বছর ধরে অবিরামভাবে ভুগছে। আমরা এখনও বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিনিদের জন্য পৃথক একটি রাষ্ট্রই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ। আমরা আশা করি, এবার আমরা তা অর্জন করতে সক্ষম হব, যাতে এই অঞ্চলের সব মানুষ নিরাপত্তা ও শান্তিতে বসবাস করতে পারে।

৩০ বছর আগে অসলো শান্তি চুক্তির আওতায় ফিলিস্তিনে যে সরকার কাঠামো তৈরি হয়েছিল, তার অধীনে ছিল পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেম। অঞ্চল তিনটি তখন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দল ফাতাহ ও অন্য গোষ্ঠীগুলোর জোট ‘প্যালেস্টাইনিয়ান অথরিটির’ (পিএ) অধীনে ছিল। তবে ২০০৭ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গাজার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে।