আনন্দ এবং উদ্বেগের সঙ্গে বিশ্বজুড়ে পবিত্র রমজান মাসকে স্বাগত

বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পবিত্র রমজান মাসের আগমনকে স্বাগত জানিয়েছে। ১০ মার্চ, রোববার নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার পর সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে, ১১ মার্চ, সোমবার থেকে রোজার মাস পালন শুরু হবে। মিশর, বাহরাইন, লেবানন, ফিলিস্তিন ও ইরাকের পাশাপাশি সুদানের মুসলমানরাও সোমবার থেকে রোজা রাখা শুরু করেছে। অবশ্য নতুন চাঁদ দেখা না যাওয়ায় বাংলাদেশ, জর্ডান, ওমান, লিবিয়া, মরক্কো এবং ইরানসহ অন্যান্য দেশগুলোতে ১২ মার্চ, মঙ্গলবার থেকে রমজান শুরু হবে।

আল-আকসা মসজিদ

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের কারণে এবারের রমজান মাসে আনন্দের পাশাপাশি উদ্বেগেরও সৃষ্টি হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী ৫ মাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফলে শোকাবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই রমজানের আগমন ঘটেছে। 

এছাড়া অনেক দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষজন নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য কিনতে পারছে না। এক্ষেত্রে পাকিস্তান এবং মিশরের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে এই দেশগুলোর জনগণ লড়াই করছে। খাদ্য, পানীয়, ফল এবং দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। তারপরেও পবিত্র এই মাসটিকে আনন্দের সঙ্গে স্বাগত জানাচ্ছে পাকিস্তানিরা। দক্ষিণ পাকিস্তানের ইসলামিক পণ্ডিত মাওলানা তানভীর উল হক থানভির মতে করাচির মানুষের চেয়ে আর কেউ রমজান মাস ভালোভাবে পালন করতে পারে না।

পবিত্র এই মাসে তার পরিবার পরিচালিত মসজিদে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করে থাকে। স্বেচ্ছাসেবকরা ইফতারের সময় রোজাদারদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার এবং পানীয় নিশ্চিত করার জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করে যান।

রমজান মাসে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী রোজাদার মুসলমানরা সকল ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকেন। এমনকি ধূমপান ও যৌন মিলন থেকেও তাদের বিরত থাকতে হয়। এ সময় মূলত ইবাদত বন্দেগিতে দিন কাটান তারা। এই মাসে প্রচুর দান করে থাকে মুসলিম সম্প্রদায়।

থানভি বলেন, ‘রমজানে, আমাদের দোয়া কবুল করা হয়। ঈমানদার বান্দা দিনরাত আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করেন। এ সময় লোকেরা অভাবী মানুষদের সাহায্য করতে চায়। এমনকি যাদের দেওয়ার মতো অনেক কিছু নেই তারাও অন্যদের সাহায্য করে থাকে। সূর্যাস্তের সময় অর্থাৎ ইফতারিতে অনেকে একটি বা দুটি খেজুর দিয়ে রোজা ভঙ্গ করবে, যেমনটি আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) করতেন।' 

এছাড়া মিশর, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডানে ইফতারি এবং সেহরিতে স্থানীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করা হয়। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায়, রমজানের আচার-অনুষ্ঠান অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়। এতে দেশটির সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয়। অনেকে রেন্ডাং নামের একটি খাবার দিয়ে রমজান উদযাপন করে। নারকেলের দুধ এবং স্থানীয় মশলা সহযোগে মাংসের এই খাবার প্রস্তুত করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানরাও ব্যাপক উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সঙ্গে একমাসব্যাপী রমজান পালন করে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টিতে বসবাসকারী দ্বিতীয় প্রজন্মের পাকিস্তানি-আমেরিকান সোনিয়া উদ্দিন জানিয়েছেন, তার পরিবার কখনও কখনও ইফতারে বার্গার, কফি এবং সেহরিতে ডোনাটস খেয়ে থাকে। তিনি তার অভিবাসী বাবা-মায়ের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার ১৪ বছর বয়সী ছেলে প্রাচ্যের চেয়ে পশ্চিমী বিশেষ করে আমেরিকান-স্টাইলের খাবার পছন্দ করে। ফলে তার জন্য ইফতারিতে সেই খাবার পরিবেশন করতে হয়।  

তবে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সম্প্রদায় গাজাবাসীর জন্যও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জুলফাত সুয়ারা নামের একজন নাইজেরিয়ান-আমেরিকান বলেছেন, আমি সবসময় গাজা উপত্যকার জন্য দোয়া করি। ফিলিস্তিনিদের এই কষ্টের দ্রুত অবসান ঘটুক।   

ন্যাশভিলের অধিবাসী আহমেদ আইয়ুব, একজন ২০ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি আমেরিকান। তিনি জানিয়েছেন, আগামি শুক্রবার শহরের ইসলামিক সেন্টারে তার পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে গাজার কথা মনে হলেই এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করে তার মধ্যে।

ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এই মার্কিনী বলেছেন, 'আমি ভালো খাবার দিয়ে ইফতার এবং সেহরি করবো। অথচ ফিলিস্তিনে আমার খালা, চাচা এবং চাচাতো ভাইয়েরা অনাহারে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। আমার সামনে এত এত খাবারের আয়োজন দেখলে অবশ্যই অপরাধবোধ থাকবে।'  

সূত্র: আরব নিউজ