শেন ওয়ার্ন: সিগারেট কি ছাড়া যায়!

সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার বলা হয় শেন ওয়ার্নকে। ২০২২ সালে স্রেফ ৫২ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি। গতকাল রোববার তার মৃত্যুর দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া। কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে ওপারে পাড়ি জমানো আরেকটা শেন ওয়ার্ন হয়ত আর আসবে না।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৫২ বছর বয়সে ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন শেন ওযার্ন

ক্রিকেট খেলাটির বড় একজন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন। ২২ গজের বাইরেও চমৎকার একজন মানুষ ছিলেন তিনি। ব্যক্তি জীবনে সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার ছিলেন সদালাপী, সদা হাস্যময় ও উদার চরিত্রের মানুষ। তবে মাঠের পারফরম্যান্সে যতটা ধারাবাহিক ছিলেন, মাঠের বাইরে ছিলেন ঠিক উল্টো একজন মানুষ।

নেশাজাত দ্রব্যের দিকে প্রবল ঝোঁক ছিল তার। যেটির ধঁকল অনেকবার পোহাতে হয়েছে তাকে। মদ, ধূমপান এসব থেকে বিরতিও নিয়েছিলেন তিনি। মদ্যপানে বিরতি একটু দীর্ঘ হলেও সিগারেট ছাড়তে পারেননি কখনোই। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ অনুষ্ঠেয় আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীন এ নিয়ে রসিকতাও হয়েছিল এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।

মিনিট খানেকের আলাপ ও খুনসুঁটি এখন শুধুই স্মৃতি হয়ে আছে। বিশ্বকাপের ধারাভাষ্যকার হওয়ায় খুব ব্যস্ত ছিলেন শেন ওয়ার্ন। মাইক্রোফোন হাতে ছোটাছুটি করছিলেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারে। হঠাৎই দেখা হয়ে গেল তার সঙ্গে। শেন ওয়ার্ন যে কিছুদিন আগেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন সেটার ছাপ বোঝা গেল তার চেহারায়।

খুব তাড়া নিয়ে আমরা উঠলাম লিফটে। সঙ্গে ছিলেন আরও দুই-তিনজন সংবাদকর্মী (সম্ভবত সুব্রত এবং জাহিদ ভাই)। লিফটের বিরক্তি এড়াতে প্রশ্ন করলাম, শেন ওয়ার্ন কেমন আছো? তার উত্তর, ‘দেখতেই পাচ্ছো, এখন বেশ ফুরফুরে (মেজাজে আছি)।’ আবারও প্রশ্ন, এখনও ধুমপান করো? এবার শেন ওয়ার্নের উত্তর, ‘সিগারেট কি ছাড়া যায়!’ উত্তরের সঙ্গে উচ্চসরে এক গাল হেসে নিলেন এই কিংবদন্তি।

নিছক মজার ছলে বললেও এটাই ছিল বাস্তবতা। তার অকাল প্রস্থান হয়েছে ঠিক দুই বছর আগে থাইল্যান্ডে। সেখানে ছুটি কাটাতে গিয়ে নিজ ভিলায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান শেন ওয়ার্ন। চিকিৎসকরা চেষ্টা করেও ফেরাতে পারেননি তাকে।

শেন ওয়ার্নকে হারানোর দুই বছর পর দুটো দৃশ্য এখন পর্যন্ত ঘুরপাক খাচ্ছে দৃষ্টিসীমায়। প্রথমটি হচ্ছে, শতাব্দীর সেরা বলটি। যেটা অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনার করেছিলেন মাইক গ্যাটিংকে। অবিশ্বাস্য ওই বলে বোল্ড হয়েছিলেন মাইক। দ্বিতীয়টি, লিফটের ওই মিনিট খানেকের খুনসুঁটি। তার জীবনটাই ছিল এমন। এলোমেলো জীবন-যাপন করতে গিয়ে কখন যে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন সেটি হয়ত নিজেও টের পাননি শেন ওয়ার্ন।