জাতিসংঘের বিশেষ দূত: সমস্ত ফিলিস্তিনিদের শাস্তি দিতে চায় ইসরায়েল

ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে হামলায় ক্ষুধাকে একটি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। ২১ ফেব্রুয়ারি, বুধবার তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুর কাছে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এই মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের খাদ্যের অধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত মাইকেল ফাখরি।

ছবি - সংগৃহীত

ফাখরি বলেছেন, ‘ইসরায়েল সমস্ত ফিলিস্তিনিদের শাস্তি দিতে চায়। এটি একটি গণহত্যা। তারা ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। গাজার মানুষ এর আগে কখনও এই স্তরের ক্ষুধা অনুভব করেনি।'  

গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও অবরোধের মধ্যে আসন্ন দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘এমনকি ইসরায়েলি বাহিনী রাফাতে চলে যাওয়ার আগেও আমরা সতর্ক করেছিলাম গাজার প্রতিটি মানুষ ক্ষুধার্ত এবং অন্তত এক চতুর্থাংশ জনসংখ্যা ক্ষুধার্ত ছিল। অবরুদ্ধে এই ছিটমহলে দুর্ভিক্ষ আসন্ন ছিল।' 

জাতিসংঘের বিশেষ এই দূত বলেছেন, ‘তারপর থেকে, দুটি জিনিস ঘটেছে। প্রথমত, বেশ কয়েকটি দেশ গাজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাকে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এই যুদ্ধের মধ্যে ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসরায়েলি বাহিনী বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত রাফা অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের ওপর হামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই অমানবিকতা, এই বর্বরতা এবং সহিংসতা বর্ণনা করার কোনো ভাষা নেই।'  

তিনি যোগ করেছেন, ‘আগে আমরা বলছিলাম দুর্ভিক্ষ আসন্ন। এই মাসের শেষের দিকে আমরা যদি বলি, আসলে একটি দুর্ভিক্ষ চলছে। তাহলে আমি আবাক হবো না। আসলে গাজায় বর্তমানে যেসব সাহায্য পৌঁছতে পারছে তা সমস্ত গাজাবাসীকে টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়।' 

মাইকেল ফাখরি উল্লেখ করেছেন, ‘ক্ষুধার্ত মানুষের সমস্যা হল এটি একটি দীর্ঘ ধীরগতির প্রক্রিয়া এবং এটি বেদনাদায়ক ও তীব্র। এর অর্থ হলো আমরা আগামী মাস, বছর এবং কয়েক দশক ধরে এর প্রভাব দেখতে পাবো। এমনকি যদি আজ একটি যুদ্ধবিরতি হয়, তাহলেও এর প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর পড়বে। কারণ অনেক শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। মনে রাখতে হবে গাজায় ১০ লাখেরও বেশি শিশু বাস করে। তাদের ভবিষ্যত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা যা জানি তা হলো, ৩ লাখ ৩৫ হাজারের মত শিশু স্থায়ীভাবে শারীরিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতার ঝুঁকিতে রয়েছে।' 

তিনি বলেছেন, ‘আমরা এই মাত্রার ক্ষুধা আর কখনও দেখিনি। আমরা কখনও পুরো জনসংখ্যাকে এভাবে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখিনি। গাজার ২২ লাখের বেশি মানুষ দ্রুত দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হতে পারে।'   

ফাখরি আরও উল্লেখ করেছেন, 'ইসরায়েলিরা বারবার সমস্ত ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়ে তাদের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে। আমরা ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের যে সমস্ত বিবৃতি পড়েছি তার উপর ভিত্তি করে বলা যায়, তাদের উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূল করা। বিশেষ করে গাজার সমস্ত মানুষকে সম্মিলিতভাবে শাস্তি দেওয়া এবং তাদের গাজা থেকে বের করে দেওয়া। এই যুদ্ধ আত্মরক্ষার জন্য নয়; এই যুদ্ধটি ৭ অক্টোবর হামাসের আন্তঃসীমান্ত আক্রমণের কারণে নয়। এর উদ্দেশ্য ছিল সমস্ত ফিলিস্তিনিদের শাস্তি দেওয়া কারণ তারা ফিলিস্তিনি। এটাই গণহত্যা।'  

সর্বশেষ জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, জাতিসংঘ এই মুহূর্তে কিছু করতে পারছে না। এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও ইসরায়েলের উপর চাপ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সংগঠিত নয়।'  

সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি