উত্তপ্ত পাকিস্তান: ভোট জালিয়াতির দায় স্বীকার করে ইসি চাতার পদত্যাগ

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি হয়েছে স্বীকার করে পদত্যাগ করেছেন রাওয়ালপিন্ডি ডিভিশনের নির্বাচন কমিশনার লিয়াকত আলী চাতা। শহরটিতে নির্বাচনী ফলাফলে কারচুপির দায় স্বীকার করে তিনি পদত্যাগ এবং একই সঙ্গে নিজের ও জড়িত অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করেন তিনি। এ নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেশটিতে। খবর ডন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।

পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি ডিভিশনের নির্বাচন কমিশনার লিয়াকত আলী চাতা

রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে লিয়াকত আলী চাতা বলেন, রাওয়ালপিন্ডিতে অন্তত ১৩ জন প্রার্থী হেরেছেন, কিন্তু তাদেরকে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধান দেখিয়ে জেতানো হয়েছে।

জালিয়াতির দায় স্বীকার করে চাতা বলেন, এই কাজ করার পর আমি রাতে ঘুমাতে পারিনি। আমার ওপর এতটাই চাপ ছিল যে, একসময় আত্মহত্যার চিন্তা করেছি। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছি জনগণের সামনে বিষয়গুলো উপস্থাপন করার।

লিয়াকত চাতা বলেন, এখন আমি শান্তিপূর্ণভাবে মরতে চাই। আমি যা করেছি, সেজন্য আমার শাস্তি হোক। পিন্ডিতে ভোট জালিয়াতির দায় নিচ্ছি আমি। সেই সঙ্গে নিজেকে পুলিশে সোপর্দ করছি।

ভোট কারচুপির জন্য পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজা ও প্রধান বিচারপতি কাজী ফায়েজ ইসা জড়িত বলে দাবি করেন চাতা। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ইসিপির জড়িত অন্যান্য কর্মকর্তার শাস্তি হওয়া উচিত।

পাকিস্তানে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদ নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ফল গড়িয়েছে জোট সরকারে। নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা ৯৩ আসনে জিতেছে। যদিও তাদের পরিচয় স্বতন্ত্র প্রার্থী। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা দলীয় প্রতীক ‘ব্যাট’ নিয়ে ভোট করতে পারেননি। সবাই স্বতন্ত্র তকমা হওয়ায় সরকারও গঠন করতে পারছে না ইমরানের দল।

অন্যদিকে ভোটে দল হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন। দলটি ৭৫ আসনে জিতেছে। এছাড়া বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পিপিপি জিতেছে ৫৪ আসনে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়ায় জোট সরকার গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পিএমএল-এন। পিপিপিকে সরকারে টানার চেষ্টা করছে নওয়াজ শিবির।

এদিকে ভোটের ফল পাওয়ার দিন থেকেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ জানিয়ে আন্দোলনের মাঠে নেমেছে পিটিআই। রাওয়ালপিন্ডির নির্বাচন কমিশনার লিয়াকত আলী চাতার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ইমরানের দলের ভোট কারচুপির অভিযোগের সত্যতা মিলছে।

তবে ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন। আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে পিইসি বলেছে, কোনো বিভাগের কোনো নির্বাচন কমিশনার, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা, এমনকি প্রিসাইডিং অফিসারও সরাসরি ভোটের সঙ্গে জড়িত নন। তারপরও দ্রুত এই অভিযোগের তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে পিইসি।