শ্রিংলা: আমি ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য সেরাটা করব

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। তিনি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের অন্তত দুই মাস আগে নতুন করে আলোচনায় চলে এসেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং আসনে তিনি নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে এই আসনে সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বিজেপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা

দার্জিলিং নির্বাচনী এলাকাটি পশ্চিমবঙ্গকে তার উত্তর-পূর্ব প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংযুক্ত করার পাশাপাশি নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভুটানের সঙ্গেও সীমানা ভাগ করে। এই কারণে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের একটি অংশ, সামরিক কর্মকর্তা এবং ভূ-কৌশলগত বিশ্লেষকরা প্রায়শই যুক্তি দিয়েছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের জেলাগুলো তাদের কৌশলগত গুরুত্বের কারণে সরাসরি দিল্লির দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত।  

অবশ্য এটির তাৎপর্য উপেক্ষা করা কঠিন, কারণ বাংলাদেশের চরম উত্তর বিন্দু এবং নেপালের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের মধ্যে প্রায় ২০ কিলোমিটার প্রসারিত 'শিলিগুড়ি করিডোর' নামে পরিচিত এলাকাটি দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে অবস্থিত। ডোকলামের মালভূমিকে ভারত, চীন ও ভুটানের ত্রি-দেশীয় জংশন বলা হয়। চীন এবং ভূটান উভয় দেশ এটিকে নিজেদের অঞ্চল বলে দাবি করে আসছে।   

অপরদিকে ভারত বরাবরই ভূটানের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে। কারণ ডোকলাম মালভূমি ভারতের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলের মাধ্যমে চীন ভারতের শিলিগুড়ির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। শিলিগুড়ি করিডোর থেকে আনুমানিক ১৫০ কিলোমিটার উপরে ভুটানের আশেপাশে চীনের সামরিক উপস্থিতি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এটি যেকোনো স্বল্প পরিসরের ভূমিভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে।  

প্রসঙ্গত, চীনের কাছে সবচেয়ে বড় ভূমিভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্র রয়েছে। চীনা সেনাবাহিনী ডোকলামের উপরে কৌশলগত পয়েন্টে অবস্থান করছে কিনা তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে।

তবে শিলিগুড়ি করিডোর নামের সরু এই করিডোরটি যদি ছিন্ন হয়ে যায় তবে এটি উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্য, সিকিম এবং উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলাকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এই প্রেক্ষাপটে বিজেপি নেতৃত্ব এমন একজন প্রার্থী চেয়েছিলেন, যিনি নিয়মিত রাজনীতিবিদ নন কিন্তু এই অঞ্চলের বিষয়ে দৃঢ় বোঝাপড়া রয়েছে এবং একজন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক হিসাবেও কাজ করেছেন। এক্ষেত্রে শ্রিংলাকে মানানসই প্রার্থী বলা যায়। 

শ্রিংলাকে মনোনীত করার আরেকটি কারণের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে তার পারফরম্যান্স। গত এক দশকে বাংলাদেশে এককভাবে সবচেয়ে প্রগতিশীল এবং জনপ্রিয় ভারতীয় কূটনীতিক হিসাবে তাকে বিবেচনা করা হয়। আর তার জনপ্রিয়তার কারণও রয়েছে। তিনি বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা ব্যবস্থার উদারীকরণ করেছেন। তার সময়ে ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে বছরে ১৫ লাখ বাংলাদেশিকে ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। 

তিনি সিকিম এবং ভারতের কিছু এলাকায় যাওয়ার জন্য পূর্বানুমোদন নেওয়ার তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়েছেন। এর ফলে সিকিম, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অংশে বাংলাদেশি পর্যটকের ঢল নামে। তার আমলে মিতালি এক্সপ্রেস চালু হয়েছিল। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি শিলিগুড়ি এবং দার্জিলিংয়ে বাংলাদেশি পর্যটকরা যেতে পারত।     

সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ‘এটা আমার জন্য অত্যন্ত তৃপ্তির বিষয় যে গত বছর অনুষ্ঠিত জি-২০ বৈঠকে আমি বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পেরেছি। ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এটিই একমাত্র দেশ যাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমি মনে করি, দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে থাকা বাংলাদেশের জন্য দুর্দান্ত উৎসাহদায়ক একটি ব্যাপার ছিল।' 

একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে তিনি দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত তিস্তার পানি ভাগাভাগি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে সহায়তা করতে পারেন কিনা সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন শ্রিংলা। তিনি বলেছেন, ‘তবে আমি দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ বাড়াতে আমার পক্ষে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আমি ২০১১ সাল থেকে এটি করে আসছি এবং উভয় দেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে আমি এটি চালিয়ে যাব।'   

উল্লেখ্য, হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন। তিনি ভারতের ৩৩তম পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার ইসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং থাইল্যান্ডে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।