পাকিস্তানকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হতে সম্মত বিলাওয়াল-শাহবাজ

পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এবং প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে দেশকে বাঁচাতে দুই দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি, রোববার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিলাওয়াল ও শাহবাজ

পিএমএল-এনের প্রেসিডেন্ট সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দুই দলের নেতারা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যত রাজনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে কথা বলেছেন। শাহবাজ শরিফ এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি দেশকে অস্থিতিশীলতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পিপিপি নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে পিএমএল-এনের প্রস্তাবগুলো পেশ করবে। পিএমএল-এনের প্রতিনিধি দলে ছিলেন আজম নাজির তারার, আয়াজ সাদিক, আহসান ইকবাল, রানা তানভীর, খাজা সাদ রফিক, মালিক আহমেদ খান, মরিয়ম আওরঙ্গজেব এবং শাজা ফাতিমা। 

এক্সে দেওয়া পোস্টে পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘পিপিপি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এবং চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বিলাওয়াল হাউসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শাহবাজ শরিফের সঙ্গে দেখা করেছেন। পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির মধ্যে রাজনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে নীতিগত ঐকমত্য হয়েছে। বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতে সম্মত হন নেতারা।'  

তিনি আরও বলেছেন, ‘বৈঠকে উভয় দল বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছে এবং প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা করেছে। পিপিপি নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে পিএমএল-এনের প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ আমাদের ম্যান্ডেট দিয়েছে। আমরা জনগণকে নিরাশ করব না বলে নেতাদের অভিমত।'   

এদিকে পিপিপি চেয়ারম্যানের কার্যালয় জানিয়েছে, সরকার গঠনের বিষয়ে পিএমএল-এনের সঙ্গে এটি পিপিপির প্রথম বৈঠক। দুই দল সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করেছে। 

এক্সে দেওয়া একটি পোস্টে পিপিপির চেয়ারম্যানের কার্যালয় বলেছে, ‘সরকার গঠনের জন্য পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতৃত্বের সঙ্গে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-এনের প্রথম আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়েছে। পিএমএল-এন সভাপতি মিয়া শাহবাজ শরিফ সহযোগিতা চাইতে বিলাওয়াল হাউসে পৌঁছেছেন। পিপিপি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিয়া শাহবাজ শরিফ সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করেছেন।' 

পাকিস্তানি পত্রিকা ডন এর খবরে বলা হয়েছে, রোববার মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের (এমকিউএম-পি) আহ্বায়ক খালিদ মকবুল সিদ্দিকী জানিয়েছেন, পিএমএল-এনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় পরবর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি। 

করাচিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সিদ্দিকী বলেছেন, ‘নির্বাচন পাকিস্তানে একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং দেশকে সংকট থেকে বের করে আনতে সব দলকেই তাদের ভূমিকা পালন করতে হবে। গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'   

ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিদ্দিকী জোর দিয়ে বলেছেন, সরকার গঠন নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, এমকিউএম-পি সরকারে যোগ দেবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।  

ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিএমএল-এন একটি বিবৃতি প্রকাশ করার পরপরই তিনি এই মন্তব্য করেছেন। ওই বিবৃতিতে দুই দল পরবর্তী সরকারে একসঙ্গে কাজ করার জন্য একটি নীতিগত চুক্তিতে পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এক্সে পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে, পিএমএল-এন নেতা মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেছেন, পিএমএল-এন এবং এমকিউএম-পি নেতারা রাজনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে একমত হয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, নওয়াজ শরিফ এবং এমকিউএম নেতৃত্বের মধ্যে একটি নীতিগত চুক্তি হয়েছে। পিএমএল-এনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, আর এমকিউএম-পির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন খালিদ মকবুল সিদ্দিকী।   

উল্লেখ্য, ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন, বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমারান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। নির্বাচনে পিটিআই সমর্থিতরা সর্বাধিক আসনে জয়লাভ করেছে। তবে সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত আসন কোনো দলই পায়নি। এ কারণে নওয়াজ শরিফ তার দলের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে অংশ নেওয়ার জন্য অন্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সূত্র: এনডিটিভি