জাতিসংঘ: হামলা এখন বন্ধ হলেও গাজার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে লেগে যাবে ২০৯২ সাল পর্যন্ত সময়

জাতিসংঘ বলেছে, ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠন এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে যুদ্ধের আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে নিতে কয়েক দশক সময় লেগে যাবে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা এখন বসবাসের জন্য বিপজ্জনক বলেও মন্তব্য করেছে বিশ্বের শীর্ষ এই সংস্থাটি। খবর আল আরাবিয়া।

ধ্বংসপ্রাপ্ত নিজ বাড়ির সামনে বসে আছেন এক ফিলিস্তিনি বৃদ্ধ

ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) একটি প্রতিবেদনে এই মূল্যায়ন উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় মারাত্মক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ধ্বংসের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে।

আঙ্কটাডের অর্থনীতিবিদ রামি আলাজেহ বলেছেন, ২০০৭-২২ সাল পর্যন্ত সময়ের প্রবৃদ্ধি অনুসারে (০.৪ শতাংশ) ২০২২ সালে গাজার অর্থনৈতিক অবস্থা যে পর্যায়ে ছিল, তাতে ফিরে আসতে ২০৯২ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের দ্বারা সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ গাজা উপত্যকাকে বসবাসের অযোগ্য এলাকায় পরিণত করেছে। জানুয়ারির শেষ নাগাদ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় গাজার ৩৭ হাজার ৩৭৯টি ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা গাজা উপত্যকার মোট আবাসনের ৫০ ভাগ। ইসরায়েলি বাহিনী হামলার ক্ষেত্রে বেসামরিক লোকজনের আবাসন, চিকিৎসালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কোনো কিছুর পরোয়া করেনি।

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স এবং জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথস গত বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ফিলিস্তিনি পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, দিনকে দিন গাজার জনগণের দুর্দশা ও দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাজার যুদ্ধ ক্রমান্বয়ে ফিলিস্তিনের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ায় এ দুর্ভোগ আরও বহুগুণে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েলের অবরোধ ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগারে পরিচিতি পেয়েছে গাজা। তখনই এই অঞ্চলের প্রায় ৮০ ভাগ অধিবাসীর আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। গত চার মাসের যুদ্ধে গাজার পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেছে। বর্তমানে গাজার জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় দিন যাপন করছে, যাদের অর্ধেকই শিশু।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনি সরকারকে তাৎক্ষণিক ও শক্তিশালী বাজেট প্রদানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, গাজায় দ্রুত পুনরুদ্ধারের যে কোনো সম্ভাবনা চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের সমাপ্তি, দাতাদের সম্পৃক্ততার স্তর এবং গাজার অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি কর্মক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে।

তবে জাতিসংঘের এ আহ্বানে কতটুকু কতটুকু সাড়া মিলবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ গাজার জন্য বিদেশি সহায়তা দিন দিন কমছে। ২০০৮ সালে যেখানে গাজাকে ৪২ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়া হতো, ২০২২ সালে তা কমে ৫৫০ মিলিয়নে নেমে আসে।