জিব্রিল রাজউব: খেলাধুলাও ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের অংশ

প্রায় চার মাস ধরে চলা হামলায় ফিলিস্তিনের একটি অংশ যখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, তখন সেই ফিলিস্তিনের ফুটবল দল পেয়েছে এএফসি এশিয়ান কাপে তাদের প্রথম জয়। দলটি বলছে, তাদের এই খেলা এবং জয় হামলাকারীদের প্রতিরোধেরই অংশ। কাতারভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেছেন প্যালেস্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জিব্রিল রাজউব।

হংকংয়ের বিরুদ্ধে জয়ের পর ফিলিস্তিনি দলের উচ্ছ্বাস

সাক্ষাৎকারে রাজউব চলমান যুদ্ধের মধ্যে ফিলিস্তিনি ফুটবল দলের প্রস্তুতি, ভবিষ্যতের জন্য তাদের পরিকল্পনা এবং ফিলিস্তিনে খেলাধুলা কেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তার বিস্তারিত জানিয়েছেন।

গত ২৩ জানুয়ারি আবদুল্লাহ বিন খলিফা স্টেডিয়ামে হংকংয়ের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলে জয়লাভ করে ফিলিস্তিনের ফুটবল দল। সে জয়ের পর রাজউব আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেন। যুদ্ধের মধ্যে ফিলিস্তিনি দলের সাফল্য কী বার্তা দেবে, এমন প্রশ্নের জবাবে রাজউব বলেন, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ প্রকাশ করা, তাদের লক্ষ্য অর্জনের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার জন্য একটি ভালো হাতিয়ার হতে পারে।

প্যালেস্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জিব্রিল রাজউব

এশিয়ান কাপের জন্য দলকে একত্রিত করা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়াটা অত্যন্ত কঠিন ছিল দাবি করে রাজউব বলেন, আমাদের গাজার অনেক খেলোয়াড় আছে যারা জাতীয় ফুটবল দল ও অন্যান্য দলে যোগ দিতে পারেনি। কিন্তু আমরা হাল ছাড়ব না। হামলাকারীরা আমাদের শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করছে। তারা চায়, ফিলিস্তিনের সবাই চলে যাক, কিন্তু আমরা আছি এবং থাকব। ফিলিস্তিনের গাজা ও অন্যান্য অংশের মধ্যে রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক বিভক্তি থাকা সত্ত্বেও আমরা ঐক্যবদ্ধ।

রাজউব বলেন, চলমান টুর্নামেন্টসহ অন্যান্য টুর্নামেন্টে যেন আমাদের খেলোয়াড়েরা অংশ নিতে পারে, সে জন্য দলের সব খেলোয়াড়কে আমরা ফিলিস্তিনের বাইরে রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমরা দেশ ছাড়ব না, আমাদের বাড়ি ছেড়ে যাব না।

ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে ফিফার অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, সংস্থাটিতে দুই ধরনের নীতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফিফা ও ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির উচিত এক মান এবং এক নীতি অনুসরণ করা। ইসরায়েলি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলে অফিসিয়াল লিগের আয়োজন করছে, যা ফিফা ও অলিম্পিক সনদের আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দ্বিতীয়ত, আমি ইসরায়েলের কোনো ক্রীড়া সংস্থাকে তাদের সরকারের আক্রমণ, ধ্বংস ও ফিলিস্তিনি খেলোয়াড়দের হত্যার সমালোচনা করতে শুনিনি।

গাজার যুদ্ধ খেলোয়াড়দের একাগ্রতা ও মনোযোগকে প্রভাবিত করছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে রাজউব বলেন, অবশ্যই। কারণ একজন খেলোয়াড়ের আত্মীয়-স্বজন যখন সবাই হামলার মুখে তখন বিষয়টি তাদেরকে প্রভাবিত করবেই। কিন্তু আত্মসমর্পণ করা আমাদের পরিকল্পনার অংশ নয় এবং তা হওয়া উচিতও নয়। যুদ্ধের কারণে আমরা সবাই মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

ফিলিস্তিনি দল ও খেলোয়াড়দের জন্য ভবিষ্যতে কী আছে, যার জন্য এই যুদ্ধের মধ্যেও তাদেরকে দেশে ফিরতে হবে? এমন প্রশ্ন করা হলে রাজউব বলেন, আমরা ফিলিস্তিনি। আমরা একই ভাগ্য, একই নিয়তি, একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, হচ্ছি এবং হব। আমরা বাড়িতে যাই, পরিবারের সঙ্গে দেখা করি। আবার কোথাও খেলার চেষ্টা করি। কারণ আমরা মনে করি, খেলাধুলা আমাদের প্রতিরোধের অংশ। খেলাধুলা আমাদের জনগণের প্রতি আমাদের জাতীয় কর্তব্যের একটি অংশ।