ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পক্ষে মার্কিন চাপ প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান নেতানিয়াহুর

মধ্যপ্রাচ্যে বরাবরই দ্বি-রাষ্ট্রীয় নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থাৎ, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় পক্ষে দেশটি। তবে চলমান গাজাযুদ্ধের মধ্যে এ নিয়ে সাম্প্রতিক মার্কিন চাপকে প্রকাশ্যেই প্রত্যাখ্যান করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজায় গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী, যাতে ২৫ হাজারের কাছাকাছি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। খবর বিবিসির।

গাজাযুদ্ধের মধ্যেই ইসরায়েলে কয়েক দফা সফর করেছেন বাইডেন

তেলআবিবে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বলে দিয়েছেন তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী। এ সময় নেতানিয়াহু গাজায় ‘সম্পূর্ণ বিজয় না হওয়া পর্যন্ত’ হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, হামাসকে ধ্বংস ও অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গাজাজুড়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ২৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি বিমানের নির্বিচার বোমা নিক্ষেপে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে উপত্যকার জনসংখ্যার ৮৫ শতাংই বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল এই যুদ্ধের লাগাম টানতে এবং টেকসই সমাপ্তি ঘটাতে একটি কার্যকর আলোচনার বৈঠকে বসতে তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে ইসরায়েলকে অস্ত্র-অর্থ দিয়ে সমর্থন করলেও গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং সেখানে ভয়াবহতার দৃশ্য বেড়ে যাওয়ায় পশ্চিমা সরকারগুলো ইসরায়েলকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে।

চলমান যুদ্ধের মধ্যে দুইবার মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বারবার ইসরায়েলে যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।

হোয়াইট হাউস বারবার ইসরায়েলের সামরিক নীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। গাজাযুদ্ধ শেষে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকাসহ দীর্ঘদিনের বহুল আকাঙ্খিত একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে একটি ভবিষ্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র একটি ইসরায়েলি রাষ্ট্রের পাশাপাশি থাকবে।

তবে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রত্বের বিরোধিতা করে কাটিয়েছেন নেতানিয়াহু। সম্প্রতি তিনি গর্ব করে বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা রোধ করতে পেরে আমি গর্বিত।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, জর্ডান নদীর পশ্চিমের সমস্ত ভূমির ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। আর নিয়ন্ত্রণ ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ভূখণ্ডকেও অন্তর্ভুক্ত করবে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে এটি একটি প্রয়োজনীয় শর্ত এবং এটি ফিলিস্তিনি সার্বভৌমত্বের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাহলে কি করতে হবে?

নিজের ছুঁড়ে দেওয়ার প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, আমি আমাদের আমেরিকান বন্ধুদের এই সত্যটি বলি এবং আমি তাদের এমন বাস্তবতা চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাও প্রত্যাখ্যান করে দিই, যা ইসরায়েলের নিরাপত্তার ক্ষতি করবে।

নেতানিয়াহর এমন অবস্থানে বিশ্লেষকদের ধারণা, ওয়াশিংটনের পরামর্শ ইসরায়েল সরাসরি প্রত্যাখ্যান করছে এবং এতদিনের পরামর্শ সবটাই বধির কানে পড়েছে।

ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক চাপের প্রকাশ্য এমন খণ্ডনে নেতানিয়াহু সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের সম্পর্কে কিছুটা ফাটল প্রসারিত হবে এবং তাতে ইসরায়েলের প্রতি তাদের অন্ধ সমর্থন কিছুটা হ্রাস পাবে বলেই মত বিশ্লেষকদের।

নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, মার্কিন সরকার দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রচেষ্টা বন্ধ করবে না। শুধু তাই নয়, গাজা পুনর্দখল করাও হবে না ইসরায়েলের।