সেই ১১ জনের মুক্তি বাতিল করল আদালত

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে ২০০২ সালে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার সময় গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বিলকিস বানো। এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ১১ জন হিন্দু পুরুষকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের মুক্তি দেয় গুজরাটের রাজ্য সরকার। ৮ জানুয়ারি, সোমবার ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে বাতিল করে তাদের জেলে ফেরত পাঠানোর আদেশ দিয়েছে।

ছবি - সংগৃহীত

ভারতের শীর্ষ আদালত দোষী প্রমাণিত এই ১১ জনকে দুই সপ্তাহের মধ্যে গুজরাটের কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে। আদালত বলেছে, এই অপরাধীদের বাইরে রাখা আইনের শাসনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না।

২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় ২১ বছর বয়সি বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করা হয়। সে সময় তিনি ৫ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। এছাড়া তার তিন বছরের মেয়েসহ তার পরিবারের ১৪ সদস্যকে হত্যা করেছিল উন্মত্ত হিন্দু জনতা। শাস্তি পাওয়া এই ১১ জন সেই জনতার মধ্যে ছিল।  

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এখনও রাজ্যটি শাসন করছে তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। ২০০২ সালের দাঙ্গার জন্য মোদিকে অভিযুক্ত করা হয়, যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।  

২০০৮ সালের গোড়ার দিকে এই ১১ ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়। এরপর তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। জেলে ভালো আচরণ করার কারণে ২০২২ সালের আগস্টে গুজরাট সরকার তাদের মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেয়।

সেই সময় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে মুক্তি পাওয়ার পর এই ১১ জনের আত্মীয় এবং সমর্থকরা তাদের মিষ্টি ও মালা দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন। তবে শাস্তিপ্রাপ্তদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছিল।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের সোমবারের রায়ে বিলকিস বানোর পরিবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। বানোর চাচা এবং তার মামলার একজন সাক্ষী আবদুল রাজ্জাক মানসুরি আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, শীর্ষ আদালতের রায় বিলকিস বানোর জন্য ন্যায়বিচারের দিকে একটি পদক্ষেপ।

তিনি বলেছেন, ‘আদালত আসামিদের দুই সপ্তাহের মধ্যে কারাগারে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ায় আমরা আনন্দিত। গুজরাট সরকার তাদের মুক্তি দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক ছিল কারণ এটা সমস্ত যুক্তির বিরুদ্ধে ছিল।'  

বিরোধী দল কংগ্রেস সোমবারের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। তবে শাস্তিপ্রাপ্ত ১১ ব্যক্তি এবং গুজরাট সরকারের পক্ষ থেকে রায়ের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

সূত্র: আল জাজিরা