যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদের সামনে ইমামকে গুলি করে হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে এক মসজিদের ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিহত ইমামের নাম হাসান শরীফ। স্থানীয় সময় বুধবার ফজরের নামাজের সময় এ ঘটনা ঘটেছে। ইমামকে হত্যার ঘটনায় সেখানকার মুসলিম কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অজ্ঞাত হত্যাকারীকে খুঁজছে পুলিশ। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের জের ধরে বিশ্বজুড়ে ইহুদি-মুসলিম উত্তেজনার মধ্যেই নিউজার্সিতে এ ঘটনা ঘটলো। খবর সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমসের।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে নিহত ইমাম হাসান শরীফ

নিহত হাসান শরীফ নিউ জার্সির নিউয়ার্ক শহরের সবচেয়ে বড় ‘মুহাম্মদ-নিউয়ার্ক’ মসজিদের ইমাম ছিলেন। তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে মসজিদটিতে ইমামতি করে আসছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ইমাম হাসান শরীফ স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় মসজিদের সামনে গাড়ি থেকে নামার সময় তাকে একাধিকবার গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়লে লোকজন তাকে হাসপাতালে নেয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েকঘণ্টার মাথায় মারা যান তিনি।

নিউয়ার্কের পাবলিক সেফটি ডিরেক্টর ফ্রিটজ ফ্রেগ বলেন, পুলিশ খবর পেয়ে সকাল ৬টার কিছু পরেই গুলির ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বন্দুকধারী পলাতক রয়েছে। হত্যার উদ্দেশ্য এখনও অজানা।

ইমাম হাসান শরীফ এলাকায় মুসলিম ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি মসজিদের ইমামতি ছাড়াও এলাকার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটিতে যুক্ত ছিলেন। এর আগে দীর্ঘদিন তিনি নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অফিসার নিযুক্ত ছিলেন।

ইমাম হত্যার ঘটনায় তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে নিউ জার্সির অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাট প্ল্যাটকিন বলেন, ইমাম শরীফ হত্যার ঘটনা কে বা কারা ঘটিয়েছে কিংবা এর নেপথ্যে কোনো গোষ্ঠীর হাত রয়েছে কিনা, তা এখনও আমরা কোনো ইঙ্গিত পাইনি। তবে এ ঘটনার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ধর্মীয় স্থাপনা বিশেষ করে মসজিদ ও ইহুদিদের সিনাগগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

তিনি স্বীকার করেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের মধ্যে বিশ্বের অনেক জায়গায় মুসলিম-ইহুদি উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তারইমধ্যে এই ইমাম হত্যার ঘটনা ঘটলো।

প্লাটকিন বলেন, আমি জানি যে বৈশ্বিক ঘটনাবলী ও অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমরাও আমাদের রাজ্যজুড়ে উদ্বেগ অনুভব করছি – বিশেষ করে এই হত্যার খবরে মুসলিম সম্প্রদায় এই মুহূর্তে নিউ জার্সিতে যারা আছেন, অনেকেই ভয় ও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।

ইমামের খুনের খবরে বুধবার সারাদিনই মসজিদ এলাকায় শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। সন্ধ্যায় মাগরিবের আগে ইমামের জানাজায় মসজিদের বাইরে সাউথ অরেঞ্জ অ্যাভিনিউ জুড়ে শত শত শোকার্ত মানুষ জড়ো হন।

এ সময় নিউয়ার্কের মেয়র রাস জে বারাকা বলেন, যতদিন লাগুক না কেন, কর্তৃপক্ষ অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনবে। ইমাম হাসান শরীফ এই শহরের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, আমরা তার ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়াবো।

নিউজার্সির গভর্নর ফিলিপ ডি. মারফি একটি বিবৃতিতে ইমাম হত্যার ঘটনায় শোক জানিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেন, এই হত্যার ঘটনায় মুসলিমরা নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের মধ্যে পড়েছেন। স্টেট কর্তৃপক্ষ অবশ্যই নিরাপত্তার খাতিরে তাদের পাশে থাকবে।