যুদ্ধ জয়ের গান ফুরাতেই বোমা কেড়ে নিল প্রাণ
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মৃত্যু একটি স্বচ্ছ নীল আকাশ থেকে হঠাৎই নেমে এসেছিল। মুহূর্তেই মাথার ওপর বোমা পড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় প্রায় একই চেহারার দুই তরুণীর দেহ। দুই বান্ধবী ক্রিস্টিনা ও সভিৎলানা। কিছুক্ষণ আগেই যারা রাস্তার ওপাশে যুদ্ধজয়ের গান শুনিয়েছে মানুষকে, গান গেয়ে তহবিল জোগাড় করেছে যুদ্ধরত ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য। গান শেষে পাশের মাঠের একপ্রান্তে গির্জার ছায়ায় পাতা বেঞ্চিতে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল দুজন। ২০ মিনিটের মাথায় দুজনের প্রাণ গেল রুশ হামলায়।
ক্রিস্টিনা ও সভিৎলানার শেষ গান ছিল এটি। গত ৯ আগস্ট জাপোরিঝিয়ায়
ইউক্রেনে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরুর ছয় মাসের মাথায় ৯ আগস্ট নিপার নদীর তীরে জাপোরিঝিয়া শহরে আকস্মিক রুশ বোমায় নিহত হন দুই বান্ধবী ক্রিস্টিনা স্পিৎসিনা এবং সভিৎলানা সিমিকিনা।
ইউক্রেনজুড়ে এখন প্রতিনিয়তই মাথার ওপর পড়ছে রুশ বোমা, রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্র। প্রতিদিনই মারা পড়ছে মানুষ। দেশটিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গত ৬৮০ দিনে কত-শত মানুষের প্রাণ গেছে, তার ইয়ত্তা নেই। যদিও এক পরিসংখ্যানে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় নিহতের কথা বলা হয়, তবে জাতিসংঘের মতে, নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
গান গেয়েই দুই বান্ধবী অর্থ জুগাচ্ছিল যুদ্ধরত ইউক্রেনীয় সেনা ও আহতদের জন্য
যুদ্ধের ময়দানে এই অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশুর মৃত্যুর মধ্যেও কারো কারো মৃত্যু একটু ভিন্ন। কেননা, ক্রিস্টিনা স্পিৎসিনার মা এখনও শুধুই কাঁদেন। বাড়ির আশপাশের গাছপালায় যখন বাতাসের হিল্লোলে ফিসফিসানি শব্দ হয়, মা হ্যালিনা স্পিৎসিনা অনুভব করেন, এটি তার মেয়ে ক্রিস্টিনার উপস্থিতি। সন্তানের আত্মা, তাকে আলিঙ্গন করছে।
হ্যালিনা বলেন, তার মেয়ে ক্রিস্টিনা একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ গায়িকা, এখন তার সেরা বন্ধু সভিৎলানার সঙ্গে গোরস্তানে পাশাপাশি শুয়ে আছে।
২১ বছরের ক্রিস্টিনা ও ১৮ বছরের সভিৎলানা যুদ্ধের মধ্যেই একসঙ্গ হয়েছিল। একজন হাতে নিয়েছিল গিটার, আরেকজনের হাতে মাউথপিস।
সঙ্গীতের প্রতি টান এবং ইউক্রেনের মানুষের প্রতি ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দুজন মিলেই তৈরি করেছিল ব্যান্ড- ‘সিমিলার গার্লস’। যুদ্ধের মধ্যেই তারা কারো বিয়ের অনুষ্ঠানে গান গেয়েছে, কখনও টেলিগ্রাম চ্যানেলে লাইভ- স্ট্রিট কনসার্ট করেছে। যা অর্থ পেয়েছে ইউক্রেনীয় সেনাদের দিয়েছে, কখনও যুদ্ধে আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক লোকদের হাতে তুলে দিয়েছে কিছু।
ক্রিস্টিনার মা হ্যালিনা বলেন, ৯ আগস্ট নিজ শহর জাপোরিঝিয়ায় একটি সুপারমার্কেটের বাইরে ব্যস্ত রাস্তায় গান করছিল দুজন – গিটার হাতে সভিৎলানা আর কণ্ঠ ছিল ক্রিস্টিনার।
সেদিন তারা বেছে নিয়েছিল যুদ্ধ জয়ের গান। উইনিং দ্য ওয়ার নামে একটি সুপরিচিত ইউক্রেনীয় গান বেছে নেয় দুজন। সন্ধ্যার বাতাসজুড়ে তাদের কণ্ঠে ভেসে ওঠে- ‘আন্ডার দ্য ব্লু স্কাই ইন দ্য র্যেইস অব ট্রুথ/ উইথ দ্য ইয়েলো সান অন মাই সোল্ডার/ উই রাইট বুকস ফর ফিউচার/ হাউ উই উইল উইন দ্য ওয়্যার।’’
তাদের সেই পারফরম্যান্স একটি ফোনে রেকর্ড করা হয়েছিল। ফুটেজে ক্রিস্টিনাকে দেখা যায়, লম্বা স্বর্ণকেশী চুল, শর্টস পরা, এবং সভিৎতলানা, হাতে গিটার, জিন্স পরা। তারা প্রাণে ভরপুর।
সেই যুদ্ধজয়ের গান গাওয়া, প্রাণ প্রাচুর্য্যে ভরা দুই তরুণীর শেষ গান ছিল সেদিন। গানটি শেষ হওয়ার পর তারা দুজন রাস্তার পাশের মাঠের প্রান্তে গির্জার বেঞ্চে গিয়ে বসেছিল একটু বিশ্রামের জন্য।
গানের স্টেজ আর গির্জার বেঞ্চি, মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে দুজনের মাথার ওপর আঘাত হানে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। কেড়ে নেয় দুটি প্রাণ।
ক্রিস্টিনা ও তার বান্ধবী সভিৎলানার জীবনের শেষ মুহুর্তের গল্প বলতে গিয়ে গভীর যন্ত্রণায় কুকড়ে ওঠেন মা হ্যালিনা। আনমনেই বলেন, গান শেষে মেয়েরা ওই মাঠে না গেলে কী হতো!
সভিৎলানার বাবা ইউরি সিমিকিন আক্ষেপে বলে বসেন, রাশিয়ানদের কখনই ক্ষমা করা হবে না। এই ক্ষমাহীনতা স্থায়ী হবে আগামী প্রজন্মের ভেতরে। আমাদের নাতি-নাতনিরা মনে রাখবে এই হত্যা-ধ্বংসযজ্ঞ।
বিবিসি অবলম্বনে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.