গাজা যুদ্ধে জন্ম নেওয়া সেই ‘রাজকুমারী আয়েশা’ আর নেই

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান এই যুদ্ধের সময় জন্মগ্রহণ করেছিল আল আমিরা আয়েশা বা রাজকুমারী আয়েশা। দক্ষিণ গাজা শহরে বিদ্যুৎবিহীন একটি হাসপাতালে মাত্র ১৭ দিন আগে জন্মেছিল নিষ্পাপ এই শিশুটি। এই হাসপাতালে প্রতিদিন বোমা হামলা করে ইসরায়েলিরা। সেই হামলার মধ্যে বেঁচে থাকতে পারলেও নিজ বাড়িতে ফেলা বোমার কবল থেকে বাঁচতে পারেনি আয়েশা। ১৯ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার ইসরায়েলি বিমান থেকে ফেলা বোমায় নিহত হয় আয়েশা ও তার ভাই।

ছবি - সংগৃহীত

সম্প্রতি দক্ষিণ গাজার রাফা শহরের আবাসিক এলাকায় বোমা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার ভোরের আগে আয়েশাদের তিনতলা ভবনে আকস্মিকভাবে হামলা করা হয়। সে সময় পরিবারের সকলেই ঘুমিয়ে ছিল। বোমা হামলায় ভবনটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। শিশুটির দাদী সুজান জোয়ারাব এই হামলা থেকে বেঁচে যান। তিনি জানিয়েছেন, আয়েশার সঙ্গে তার ভাই ২ বছর বয়সী আহমেদও নিহত হয়েছে। 

সুজান বলেছেন, ‘মাত্র দুই সপ্তাহ হয়েছে আয়েশার বয়স। এমনকি তার নামও নিবন্ধন করা হয়নি। সে খুব কঠিন পরিস্থিতিতে পৃথিবীতে এসেছিল।' তিনি তার ছেলের হাসপাতালের বিছানার পাশ থেকে কথা বলছিলেন। এ সময় তার কণ্ঠ কাঁপছিল। তার ছেলে অর্থাৎ আয়েশার বাবা বোমা হামলায় আহত হন। 

সুজান বলেছেন, ‘আমরা দেখতে পেলাম পুরো বাড়িটি আমাদের ওপর ভেঙে পড়েছে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত ও মৃতদের টেনে বের করেছে।'  

আড়াই মাস ধরে চলা ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের ফলে গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজারে পৌঁছেছে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার বেশিরভাগ ভবন ধ্বংস হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে ভবনে থাকা হাজার হাজার মানুষ।

ইসরায়েলি হামলায় গাজার বেশিরভাগ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে হাসপাতাল, স্কুল এবং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু জোয়ারাব পরিবার এই সংঘাতের মধ্যেও নিজেদের ঘরেই থেকে গিয়েছিল। একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম ধ্বংসাত্মক এই যুদ্ধে ১৯ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই সংখ্যা গাজায় বাস করা জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগের বেশি। 

মঙ্গলবারের হামলায় আয়েশাদের পরিবারের ১৩ জন সদস্য নিহত হয়েছে। এছাড়া আদেল নামের একজন সাংবাদিকও প্রাণ হারিয়েছেন। তবে রাজকুমারী আয়েশা এবং আহমেদের বাবা-মা বেঁচে গিয়েছেন। তাদের মা মালাক এবং বাবা মাহমুদ আহত হয়েছেন। মাহমুদ যখন রাফার কুয়েতি হাসপাতালে তার বিছানায় শুয়ে ছিলেন, সুজান তখন শিশু দুটিকে কবর দেওয়ার আগে শেষ বিদায়ের জন্য নিয়ে আসেন। 

মাহমুদ তাদের দেখে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে উঠলেন। তিনি সাদা কাফনে মোড়ানো দুই বছর বয়সী আহমেদকে কোলে তুলে নিলেন। অপরদিকে তার স্ত্রী মালাক রাজকুমারী আয়েশাকে জড়িয়ে ধরেন। 

মঙ্গলবার সকালে রাফাহ হাসপাতালের বাইরে নিহতদের জানাজায় ডজনখানেক শোকার্ত মানুষ অংশ নিয়েছিল।

আয়েশার দাদি সুজান বলেছেন, ‘আমি আমার নাতি-নাতনিকে রক্ষা করতে পারিনি। আমি চোখের পলকে তাদের হারিয়েছি।' 

উল্লেখ্য, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ হাজার শিশু রয়েছে।

সূত্র: দ্য নিউ আরব, এপি