মোসাদের অভিযান ভণ্ডুল করে তরুণ ফিলিস্তিনি হ্যাকারকে রক্ষা করলেন তুর্কি গোয়েন্দারা

দীর্ঘদিন চেষ্টার পর তরুণ এক ফিলিস্তিনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে তুলে নিয়েছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। তবে মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায় তাদের সে অপচেষ্টা ভণ্ডুল করে তাকে উদ্ধার করেছে তুরস্কের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি। গত বছর এ ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি প্রকাশ পায়। খবর ডেইলি সাবাহ ও হুরিয়াত ডেইলি।

এমআইটির সদর দপ্তর

খবরে বলা হয়, ওমর এ নামের ওই তরুণ হ্যাকার ইসরায়েলের কুখ্যাত আয়রন ডোম এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম হ্যাকিংয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেছিলেন। ফলে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বেশ কয়েকবার আয়রন ডোমে সমস্যা তৈরি হয়। তিন বছর ধরে খোঁজ খবর করার পর মোসাদ জানতে পারে এর পেছনে হাত রয়েছে ফিলিস্তিনি হ্যাকার ওমরের।

ওমর গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি হ্যাকিং সফ্টওয়্যার তৈরি করেছিলেন, যেটি অ্যান্ড্রয়েডে অপারেটিং সেলফোনে অনুপ্রবেশ করতে পারে। এর মাধ্যমে ইসরায়েলি আয়রন ডোম সিস্টেমকে হ্যাক করে হামাসের আল-কাসাম ব্রিগেড ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায়।

মোসাদ

তার ব্যাপারে জানার পর মোসাদ তাকে টার্গেট করে অপহরণের চেষ্টা করতে থাকে। ইসরায়েলি সংস্থাটির লক্ষ্য ছিল, ওমরকে ইসরায়েলে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা, সম্ভব না হলে হত্যা করা। এ কারণে তাকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি অভিযান চালায় মোসাদ।

তবে সে পথে সফল না হয়ে মোসাদ তাকে উন্নত চাকরির টোপ দেয়। ২০১৯ সালে তাকে নরওয়ের একটি সফটওয়্যার কোম্পানির মাধ্যমে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে ওমর ওই চাকরির সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পৃক্ততা বুঝতে পেরে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন।

২০২০ সালে ওমর তুরস্কের ইস্তাম্বুল চলে যান। সেখানেও মোসাদ তার পিছু নেয়। ফরাসির কোম্পানির ছদ্মবেশে বারবার তার প্রতি টোপ ফেলা হয়। তবে সে সময় তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি তার নিরাপত্তার ব্যাপারে খেয়াল রাখতে থাকে। মোসাদের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে তারা ওমরকে সতর্ক করতে থাকে।

২০২২ সালের জুনে নিকোলা রাডোনিজ নামের এক মোসাদ সদস্য ওমরের জন্য ব্রাজিল বা ইস্তাম্বুলে চাকরির ফাঁদ পাতেন। তার সঙ্গে আরও তিনজন মোসাদ সদস্য সফটওয়্যার ডেভেলপার সেজে ওমরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাকে ওই দলের সঙ্গে যুক্ত হতে এবং তাদের সঙ্গে বিদেশ সফরে যেতে প্রায় রাজি করে ফেলে মোসাদ সদস্যরা। পরে এমআইটির সতর্কবার্তায় সে যাত্রায় রক্ষা পান।

কিন্তু মোসাদ তার পিছু ছাড়েনি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ওমর ছুটি কাটাতে মালয়েশিয়ায় যান। এর আগেই এমআইটির কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের ইস্তাম্বুল শাখা তাকে অপহরণের আশঙ্কার কথা জানিয়ে তার ফোনে ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ইনস্টল করে দেয়। মালয়েশিয়া যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই ওমরকে কুয়ালালামপুর থেকে অপহরণ করে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের একটি দুর্গম এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মোসাদের মালয়েশিয়া শাখার সদস্যরা তাকে জেরা করে। সেখানে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগ দেয় তেল আবিবের মোসাদ সদস্যরাও।

তারা ওমরের কাছে জানতে চায় ওমর কোন পদ্ধতিতে আয়রন ডোম হ্যাক করেছিলেন এবং অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক হ্যাকিং সফটওয়্যার তৈরিতে তিনি কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। এই সময়ের মধ্যেই এমআইটি নিজস্ব সফটওয়্যারে মাধ্যমে ওমরের অপহরণের বিষয়ে জানতে পারে। এরপর তারা দ্রুত মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। একই সঙ্গে ওমরকে কোথায় রাখা হয়েছে তা চিহ্নিত করতে তাদের সাহায্য করে। পরে মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দুর্গম ওই অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ওমরকে উদ্ধার করে এবং তাকে অপহরণের অভিযোগে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। এর পরপর ওমর তুরস্কে ফিরে আসেন এবং তাকে এমআইটির একটি সেফ হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে মোসাদের হাতে ধরা পড়ার পরও এমআইটির সহযোগিতায় তিনি মুক্তি লাভ করেন।