সন্তান মুক্তি পাচ্ছে, তাই চকলেট কেক হাতে মায়ের অধীর অপেক্ষা

ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের বন্দী বিনিময়ের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের অন্যতম গাজার তরুণ উবাই। তার মুক্তির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তার পিতা-মাতা, ভাইবোন ও স্বজনরা। প্রতিটি মুহূর্ত উদ্বেগে কাটছে তাদের। খবর আল জাজিরা।

উবাইয়ের প্রিয় চকলেট কেক হাতে তার মা

তরুণ উবাইয়ের মা ফিদা আবু মারিয়া কয়েকদিন ধরে কেবলই তার ছেলের বিছানা তৈরি করছেন। তার ধোয়া ধোয়া কাপড় বারবার ভাঁজ করছেন। তার পছন্দের খাবারের আয়োজন করতে যাচ্ছেন, আর প্রতি মুহূর্তে ছেলেকে নিরাপদে ফিরে পাওয়ার দোয়া করছেন।

জানা গেছে, ইসরায়েলি ৫০ বন্দীর বিপরীতে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে উবাইয়ের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নন। তবুও আশায় বুক বেঁধে তারা অপেক্ষা করছেন উবাইয়ের ফিরে আসার।

হামাস-ইসরায়েলের সর্বশেষ সংঘাতের আগে গত ৮ আগস্ট যখন ইসরায়েলি বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করছিল, তখন তার বয়স ১৮ বছর চার মাস। গত বছর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে তার কনুইতে গুলি লেগেছিল। সে হাত কার্যকরী করে তোলার জন্য থেরাপি চলছিল। কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করায় সেই থেরাপি বন্ধ হয়ে যায়। তবে অন্যান্য ফিলিস্তিনি তরুণের মতো উবাইয়ের এটাই প্রথম গ্রেপ্তার নয়, বরং এর আগেও তাকে আরও চারবার ধরে নেওয়া হয়েছিল।

উবাইয়ের মুক্তি অপেক্ষায় রয়েছে তার পরিবার, ছবি - সংগৃহীত

উবাইয়ের বাবা ইউসুফ বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের পর তার ওপর ব্যাপক অত্যাচার চালানো হয়। এছাড়া তার হাতের চিকিৎসা চালানোও সম্ভব হয়নি। ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। খাদ্য, বস্ত্রের মতো মৌলিক অধিকার থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাকে এক বন্ধু জানিয়েছেন, যেসব বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে, তাদের তালিকায় উবাইয়ের নামও রয়েছে। তার মুক্তির জন্য আমি গাজার জনগণ, বিশেষ করে যারা শহিদ ও আহত হয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কারণ তারাই আমাদের ছেলেদের মুক্তির উপায় বের করেছে। তিনি নিজেও অন্তত ৩০ বার ইসরায়েলি সেনাদের হাতে বন্দী হয়েছেন বলে জানান।

উবাইয়ের মা বলেন, ছেলের মুক্তির খবরে যেন আমি উড়ছি। শুধু আমি কেন, যেই শুনবে, তার সন্তান মুক্তি পাবে, সেই খুশিতে ভরে ওঠবে। কিন্তু এটা তিক্ত অভিজ্ঞতাও বটে, কারণ আমাদের এ ক্ষুদ্র আনন্দ অর্জিত হচ্ছে গাজার অগণিত মানুষের রক্তের বিনিময়ে। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

ফিদা আবু মারিয়া আরও বলেন, আমি উবাইয়ের জন্য খাবার প্রস্তুত করছি। তার প্রিয় খাবার, দইয়ের সসে স্টাফ করা জুচিনি এবং তার পছন্দের চকোলেট কেক তৈরি করছি। এখন থেকে আমি তাকে প্রতিদিন সকালের নাস্তায় ডেজার্ট বানিয়ে দেবো। তার আসার অপেক্ষায় আমি তার ঘর সাজিয়েছি এবং তার নতুন জামা কাপড় ধুয়েছি। আত্মীয়-স্বজনদের ডেকেছি। এখন সবাই উত্তেজিত। সবাই আমাদের আনন্দ ভাগ করে নিতে এবং তাকে স্বাগত জানাতে চায়।