এক রায়ে ২০০ আসামির ২২০০ বছর জেল

একটি মাফিয়া চক্রের ২০০ আসামির বিরুদ্ধে এক রায়ে ২২০০ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করেছেন ইতালির এক আদালত। আসামিরা ইউরোপজুড়ে প্রভাবশালী ইতালীয় অপরাধী চক্র এনড্রাংঘেটার সদস্য। তাদেরকে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে খুন, মাদক চোরাচালান, অর্থ পাচার পর্যন্ত অপরাধের জন্য দণ্ডিত করা হয়েছে। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ানের।

মাফিয়াচক্রের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন ইতালির বিশেষ আদালত

ঐতিহাসিক এ রায়টি ইতালির কয়েক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাফিয়া বিচার। দক্ষিণ ইতালির রাজনীতি ও সমাজের ওপর এনড্রাংঘেটা মাফিয়া চক্রটির প্রভাব বিশাল। চক্রটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদসহ হোয়াইট কলার অপরাধীরা।

সাজাপ্রাপ্ত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সিনেটর ও আইনজীবী জিয়ানকার্লো পিত্তেলি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনির দল ফোরজা ইতালিয়ার এই সিনেটর মাফিয়াচক্রটির সঙ্গে যোগসাজশ থাকায় ১১ বছরের সাজা পেয়েছেন।

দোষী সাব্যস্ত অন্যদের মধ্যে বেসামরিক কর্মচারী, বিভিন্ন পেশাদার ব্যক্তি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও রয়েছেন। মূলত এসব হোয়াইট কলার অপরাধীদের জন্যই ইতালির অর্থনীতি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে অনুপ্রবেশের সুযোগ পেয়েছে এনড্রাংঘেটা।

বিচারটি লামেজিয়া টারমে শহরের উপকণ্ঠে একটি কল সেন্টারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে অনুষ্ঠিত হয়। মামলায় খালাস পেয়েছেন শতাধিক আসামি।

বিগত তিন বছর ধরে মামলাটির বিচারকাজ চলে। মামলা পরিচালনায় ছিলেন ৬০০ আইনজীবী, সাক্ষী ছিলেন ৯০০ জন। এ সময়ে মামলার বিচারকদের ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে।

আদালতে নিরাপত্তার যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য এতসংখ্যক আসামিকে খাঁচা দিয়ে ঘেরা কক্ষে রাখা হয়।

মামলার তদন্ত শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। ইতালির ১১টি অঞ্চলে ২৫০০ পুলিশ সদস্যের দিনের পর দিন অভিযানে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।

ক্যালাব্রিয়ার দরিদ্র অঞ্চলে উদ্ভূত 'এনড্রাংঘেটা' বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অপরাধমূলক সংগঠনগুলোর একটি বিবেচিত। ইউরোপের কোকেনের বাজারের ৮০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে এই মাফিয়া চক্রটি। গ্যাংটির আনুমানিক বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলার।

এক্সেটার ইউনিভার্সিটির ক্রিমিনোলজির অধ্যাপক আন্না সের্গি বলেন, ঐতিহাসিক এই বিচারে ক্লাসিক মাফিয়াতন্ত্র দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। চাঁদাবাজি বা মাদক পাচারের মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে প্রথাগত সহযোগী হিসেবে হোয়াইট কলার অপরাধীদেরও সাজা দেওয়া হয়েছে।