শেষ দিনে হতাশাই দিলো ওয়েলিংটন

প্রথম ইনিংসের স্বপ্নের মতো গল্পটা আর থাকলো না ওয়েলিংটন টেস্টের শেষে এসে। কিউইদের কাছে এই ম্যাচেও হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। শেষ ইনিংসে জেতার জন্য স্বাগতিকদের লক্ষ্য ছিলো ২১৭ রান। বাকি থাকা ৫৭ ওভারে সহজেই লক্ষ্য ছুঁয়েছে কিউইরা।

এই ম্যাচে ভাগ্যও অবস্থান নিয়েছিলো বাংলাদেশের বিপক্ষে। প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলা দলটি দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৬০ রানে। ইনজুরিতে পড়ে নিজেদের ব্যাটিংটাই করতে পারেননি ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহিম। ম্যাচটি শেষ হয়েছে বাংলাদেশের তিনজনের কিপিংয়ের মাধ্যমে।

এক মুশফিকই এই ম্যাচে ইনজুরির বাঁধায় পড়েছেন অন্তত তিনবার। প্রথম ইনিংসে ১৫৯ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলার পথে দুই হাতের দুই আঙুলে চোট পান তিনি। ব্যথা ও ফোলার কারণে পরে কিপিংয়েও দাঁড়াতে পারেননি অধিনায়ক। তার বদলে কিপিং করেন ইমরুল।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সামান্য কিপিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে দীর্ঘ সময় কিপিং এবং পরে আবার ওপেনিংয়ে নামার ধকল সামলাতে না পেরে ধসে পড়ে ইমরুলের শরীর। দৌড়ে রান নিতে গিয়ে চোটে পড়েন তিনি। মাঠ ছাড়তে হয় স্ট্রেচারে করে।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ সময়ে বড় আঘাতটা পায় মুশফিকের বিদায়ে। নিল ওয়েগনারের শর্ট বল লাগে গিয়ে তার মাথার পিছনের নিচের দিকের অংশে। সঙ্গে সঙ্গে মাঠে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মাঠ ছাড়েন স্ট্রেচারে শুয়ে। পরে হাসপাতালেও যেতে হয় তাকে। ডাক্তারি পরীক্ষায় কোনো জটিলতা ধরা পড়েনি। শঙ্কামুক্তই আছেন মুশফিক।

ইমরুল- মুশফিকের দুর্ঘটনা তো ছিলোই; সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাটসম্যানদের ভুল শট নির্বাচন। কিউই পেসারদের ছোড়া একের পর এক শর্ট বলের সামনে দ্বিতীয় ইনিংসে দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি কেউই। প্রথম ইনিংসের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান সাকিব দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো রানই পাননি। ক্রিকেট ইতিহাসে যা ডাবল সেঞ্চুরির পর শূন্য রানে বিদায় নেয়ার মাত্র ষষ্ট ঘটনা।

তার আগে মাত্র পাঁচ রান করে গেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। গতকালই বিদায় নিয়েছিলেন তিনি। নাইটওয়াচম্যান হয়ে বেশ আগে ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ এসেছিলো মেহেদি হাসান মিরাজের সামনে। নিজেকে ব্যাটসম্যান ভাবতে পছন্দ করা এই অলরাউন্ডার পরিপক্কতার প্রমাণ রাখতে ব্যর্থ হয়ে বিদায় নেন রান আউটে।

চতুর্থ দিনের খেলা শেষে অপরাজিত থাকা মুমিনুলের ব্যাটে আরো একটা বড় ইনিংসের স্বপ্ন দেখছিলেন সমর্থকরা। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও, আগের দিনের সাবলিল খেলা টেনে নিতে ব্যর্থ তিনি। আউট হয়েছেন ২৩ রান করে।

কিউই পেসারদের সামনে যা একটু লড়েছেন কেবল সাব্বির রহমান। টানা দ্বিতীয় ইনিংসে তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। তার এই ইনিংসে ভর করেই কিউইদের ২১৭ রানের মামুলি লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ।

৫৭ ওভারে ২১৭ রান; খুব বড় লক্ষ্য না হলেও, টেস্টে এই রান করারও কঠিন। কিন্তু কিউইদের কাছে এটা কঠিন করে তুলতে পারেননি তাসকিন- রাব্বিরা। মেহেদি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তার প্রথম উইকেট পাওয়ার পর হেনেছেন আরো এক আঘাত, কিন্তু তাতেও কিউইদের উপর খুব একটা প্রভাব বিস্তার করা যায়নি।

কেন উইলিয়ামসনের দারুণ এক সেঞ্চুরিতে ভর করে সাত উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্য পূরণ করে ফেলে স্বাগতিকরা। কিউই অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত ১০৪ রানে অপরাজিত থাকেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস) ৫৯৫/৮ডিক্লেয়ার, সাকিব আল হাসান ২১৭, মুশফিকুর রহিম ১৫৯; নিল ওয়েগনার ৪/১৫১, ট্রেন্ট বোল্ট ২/১৩১। বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস) ১৬০/১০, সাব্বির রহমান ৫০, ইমরুল কায়েস ৩৬; বোল্ট ৩/৫৩, স্যান্টনার ২/৩৬।

নিউজিল্যান্ড (প্রথম ইনিংস) ৫৩৯/১০, টম ল্যাথাম ১৭৭, মিচেল স্যান্টনার ৭৩; কামরুল ইসলাম ৩/৮৭, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২/১৫; নিউজিল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস) ২১৭/৩; উইলিয়ামসন ১০৪*, রস টেলর ৬০; মেহেদি ২/ ৬৬

ফল: নিউজিল্যান্ড সাত উইকেটি জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।