উত্তর কোরিয়ার ‘হামাস স্টাইল’ হামলার শঙ্কায় দক্ষিণ কোরিয়া

উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে ‘হামাস স্টাইলে’ হামলার আশঙ্কায় ভুগছে দক্ষিণ কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন রবিবার দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গেলে নিজেদের এমন শঙ্কার কথাই প্রকাশ করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইওল। শুধু তাই নয়, নৈশভোজে আসা মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকেও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট ইয়ুন। খবর বিবিসির।

সিউলে প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুকের সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিনকে সিউলে নিজের বাড়িতে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান প্রেসিডেন্ট ইয়ুন। দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্ট তখন অস্টিনকে বলেন, উত্তর কোরিয়ার হামাস স্টাইলের কৌশলী আকস্মিক আক্রমণসহ যে কোনও হামলার ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা ৭ অক্টোবর আকস্মিকভাবেই ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে হামলা চালায়। এতে ইসরায়েলের দাবি, একদিনেই সেনাসহ ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। যদিও ওইদিন থেকে গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তাতে গাজায় গত ৪০ দিনে ১২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

তবে ওই ঘটনার পর থেকেই উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে হামাস স্টাইলের হামলার আতঙ্কে ভুগছে দক্ষিণ কোরিয়া।

শুধু দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টই নন, অন্যান্য রাজনীতিবিদ, এমনকি প্রতিরক্ষা প্রধানরাও এ ধরনের কথা বলছেন এবং হামাসের সঙ্গে পিয়ংইয়ংকে তুলনা করছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যানও সম্প্রতি বলেছেন, পিয়ংইয়ং ভবিষ্যতে হামাসের আক্রমণের মতো করে সিউলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে পারে।

প্রশ্ন উঠেছে, দক্ষিণ কোরিয়া কি সত্যিই উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে এ ধরনের হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে, নাকি নিজেদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে উজ্জীবিত রাখার এবং একইসঙ্গে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরহস্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে?

দক্ষিণ কোরিয়া চিরশত্রু উত্তর কোরিয়াকে পাশে নিয়েই বাস করছে, যারা প্রায়ই দক্ষিণকে ধ্বংস করার হুমকি দিয়ে থাকে। এ নিয়ে দুই কোরিয়ার মধ্যে সবসময়ই উত্তেজনা তুঙ্গে।

উত্তর কোরিয়ার সেনারা সর্বশেষ ১৩ বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি দ্বীপে গোলাবর্ষণ করেছিল। ওই ঘটনায় দক্ষিণের দুই মেরিন সেনা এবং দুইজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন উত্তর কোরিয়া নিজেদের কৌশল পাল্টেছে। তারা এখন আর সীমান্ত সংঘাতেই সীমাবদ্ধ নেই, সরাসরি সিউলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কৌশল নিয়ে চলছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার মিলিটারি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ফেলো রু সুং ইয়োপ বলেন, হামাসের মতো হাইব্রিড যুদ্ধে জড়ানোর দিক থেকে উত্তর কোরিয়া ঐতিহ্যগতভাবে ভিন্ন কৌশলে রয়েছে। আর ওইরকম যুদ্ধ লাগলে সিউলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি।

যদিও উত্তর কোরিয়ার হামলার হাত থেকে বাঁচতে দক্ষিণ কোরিয়া ইসরায়েলের আয়রন ডোমের মতো নিজস্ব মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে নিয়েছে। তবে উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি হামাসের চেয়ে হাজার হাজার গুন বেশি।

এ বিষয়ে কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের উত্তর কোরিয়ার গবেষণার পরিচালক হং মিন বলেন, ইসরায়েলে হামলা চালাতে হামাস প্রধানত স্বল্প পাল্লার রকেটের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের অনেক বড় রেঞ্জ এবং দেশটির হাতে বিভিন্ন ধরনের কামান রয়েছে। এর স্ট্রাইক সক্ষমতা হামাসের চেয়ে বহুগুণ বেশি। তাই হামাসকে তুলনায় আনা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।