ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পরিকল্পনা করছে আরব আমিরাত!

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গণহত্যা চালানোর কারণে বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের নিন্দা জানানো হচ্ছে। এমনকি লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়া দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। অথচ মুসলিম এবং আরব দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই ) আন্তর্জাতিক ক্ষোভ সত্ত্বেও ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার পরিকল্পনা করেছে। ইউএই সরকারের নীতির সঙ্গে পরিচিত চারটি সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের পতাকা

২০২০ সালে মার্কিন মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে আরব আমিরাত এবং বাহরাইন। ইসরায়েল একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি মেনে না নেওয়া সত্ত্বেও দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হয়েছিলেন আমিরাতি প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।

গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনে ক্রমবর্ধমান মৃতের সংখ্যা আরব রাজধানীগুলোতে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। আমিরাতের প্রেসিডেন্ট গত মাসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে চলমান এই যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন।

এদিকে আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন এবং বারবার সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে একজন আমিরাতি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার ছিল যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা এবং মানবিক করিডোর উন্মুক্ত করা। 

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক আমিরাতি ৪টি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি, সংযুক্ত আরব আমিরাত আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করেছে। যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর যেন বিস্তৃত সংলাপে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে এই লক্ষ্যে কাজ করছে আমিরাত।

আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ ৯ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার আবুধাবিতে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। এতে অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। লড়াইয়ে বিরতির বিনিময়ে সীমিত সংখ্যক জিম্মি মুক্তির বিষয়েও কথা বলেছেন উভয় নেতা। 

গত তিন বছরে ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক গড়ে ওঠা সত্ত্বেও, গাজা আক্রমণে ইসরায়েলের লাগাম টানতে খুব একটা সফল হয়নি আরব আমিরাত। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

আমিরাতি এই সূত্রগুলো জানিয়েছে, শেখ মোহাম্মদ যুক্তরাষ্ট্রের আচরণে হতাশ হয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশটি যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরায়েলের ওপর যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করছে না।  

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের তিন বছরের মধ্যেই দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ২০২২ সালে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী আবুধাবিতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা করেছিল। এরপর ইসরায়েল সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করে।

ইসরায়েলি সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের হোটেল, সৈকত এবং শপিং সেন্টারে ভিড় করেছে ইসরায়েলি পর্যটকরা।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেছেন, ‘ইউএই ইসরায়েলের কাছ থেকে এমন কিছু লাভ করেছে, যা তারা হারাতে চায় না।‘

তবে আমিরাতি চারটি সূত্র জানিয়েছে, চলমান এই সংকট আরও বাড়লে সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলের সঙ্গে তার সম্পর্ক কমাতে বা ছিন্ন করতে পারে।

সূত্র: রয়টার্স

কি কি কিওয়ার্ড হতে পারে?