চীন সীমান্তে বড় ধাক্কা খেয়েছে মিয়ানমার জান্তা

চীনের সঙ্গে সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। বিশেষ করে শান রাজ্যে তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী এক হয়ে জান্তার বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ করে সম্প্রতি এ সাফল্য দেখিয়েছে। তাদের সহায়তা করেছে জান্তা সরকারবিরোধী কয়েকটি সশস্ত্র গ্রুপ। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সীমান্ত অঞ্চলের কয়েক ডজন সেনা ক্যাম্প দখলে নিয়ে তারা। সবচেয়ে বড় ঘটনা হচ্ছে, চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের স্থলপথ দখলে নিয়েছে তারা। এতে বন্ধ হয়ে গেছে চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের স্থল বাণিজ্য।

জাতিগত বিদ্রোহীদের কাছে পরাস্ত মিয়ানমার সেনারা

মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে হটিয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখল করে নেয় জান্তা বাহিনী। সামরিক অভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভের মুখোমুখি হলেও বিদ্রোহীদের কাছে এটিই প্রথম গুরুতর ধাক্কা খেয়েছে সামরিক সরকার।

অভ্যুত্থানের পর আরও জ্বলে উঠা সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে গত আড়াই বছর ধরে চালানো লড়াই সামরিক বাহিনীকে আরও দুর্বল করে ফেলেছে এবং তাতেই হয়তো পরাজয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

কারেন, কাচিন, কারেন্নি এবং চিনের মতো কিছু সুপ্রতিষ্ঠিত জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী, জান্তার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুতদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) সঙ্গে মৈত্রী করেছে।

শান রাজ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্তত ছোট চারটি বিদ্রোহী বাহিনী শক্তিশালী সেনাবাহিনী তৈরি করেছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হল ওয়া, যাদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও চীন সমর্থিত প্রায় ২০ হাজার সেনা রয়েছে। তারপরে রয়েছে কোকাং, পালাউং বা তায়াং এবং রাখাইনরা।

অন্য তিনটি জাতিগত গোষ্ঠী - কোকাং এমএনডিএএ, তাং টিএনএলএ এবং আরাকান আর্মি – মিলে গঠন করেছে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স।

অভ্যুত্থানের পর থেকে এসব বিদ্রোহী গোষ্ঠী বারবার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।

গত আড়াই বছরে জান্তা সরকার বিদ্রোহীদের দমনে সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে মুহূর্মুহু বিমান হামলা চালিয়েছে, কামানের গোলার আঘাতে বাড়িঘর ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। তাতে সামরিক জান্তা হাজার হাজার মানুষকে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে কিন্তু বিদ্রোহীকে কাছে হারানো মাটি পুনরুদ্ধার করতে পারেনি।

শুধু তাই নয়, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শতাধিক সেনা খুইয়েছে জান্তা সরকার। নিহতদের মধ্যে উত্তর শান রাজ্যে নিয়োজিত বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং কিয়াউ লুইন রয়েছেন। সেনা অভ্যুত্থানের পর যুদ্ধে নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র অফিসার তিনি।

বিদ্রোহীদের হাতে জান্তার এই পরাস্ত হওয়াটা একদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ, সেটি হচ্ছে, শান রাজ্যে সুসজ্জিত বিদ্রোহীরা জান্তাকে উৎখাত এবং গণতান্ত্রিক শাসন পুনরুদ্ধার করার মতো সামর্থ্য অর্জন করতে পেরেছে।

যাইহোক, সীমান্তে বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের দখলে থাকা অঞ্চল সম্প্রসারণে তাদের দীর্ঘদিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল। অবশেষে তারা সফল হয়েছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, চীন সরকার সীমান্ত বরাবর বিদ্রোহীদের এগিয়ে যেতে বাধা দেয়নি। সম্ভবত মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর তারা কিছুটা নাখোশ।

বিবিসি অবলম্বনে।