বাংলাদেশ ও আম্পায়ারকে ধুয়ে দিলেন ম্যাথুস

ক্রিকেটের প্রায় দেড় শ’ বছরের ইতিহাসে বিরল এক ঘটনার সাক্ষ্যি হলো দিল্লির অনুন জেটলি স্টেডিয়াম। সোমবার প্রথম ব্যাটার হিসেবে টাইমড আউট হলেন শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। নতুন ব্যাটার হিসেব প্রথম বল মোকাবেলা করার আগেই দুই মিনিটের বেশি সময় নেওয়ার শাস্তি হিসেবে ম্যাথুসকে এই আউট দেন আম্পায়ার।

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা লড়াইয়ে ভেতর আলাদাভাবে দেখা গেছে সাকিব-ম্যাথুসের স্নায়ুযুদ্ধ

আউটের সিদ্ধান্ত আসে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আবেদনের প্রেক্ষিতে। তাকে হেলমেটের ত্রুটির কথা জানান ম্যাথুস। তাই আউটের আবেদন তুলে নেওয়ার আহ্বান করলেও তাতে সাড়া দেননি সাকিব। নিজের জায়গায় অটল থাকেন তিনি। এ নিয়ে ম্যাচজুড়ে দুই জনের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ দেখা গেছে। কাকতালীয়ভাবে সাকিবকে আবার আউট করেছেন ওই ম্যাথুসই!

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টাইমড আউটের ঘটনা আছে আরও ছয়টি। তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এবারই প্রথম। এই আউটকে কেন্দ্র করে ম্যাচ শেষে দুই দলের খেলোয়াড়রা হাত মেলাননি। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অবধারিতভাবেই প্রসঙ্গটি উঠেছে ম্যাথুস ও সাকিবের সামনে। সাকিব জানান, দেশকে জেতানোর জন্য এটি করেছেন তিনি। এটি সঠিক না ভুল জানেন না তিনি। তার কাছে দলকে জেতানোটা যুদ্ধ মনে হয়েছে।

তবে ক্ষোভ আর হতাশার বিস্ফোরণ ঘটালেন ম্যাথুস। তার দাবি দুই মিনিট পার হওয়ার আগেই আবেদন করেছিল। হাতে আরও পাঁচ সেকেন্ড সময় ছিল। এটির প্রমাণ আছে তার কাছে। পরবর্তীতে ভিডিও ফুটেজসহ প্রকাশ করবেন লঙ্কান অলরাউন্ডার। সেটি হয়ত করতে পাবেন। কিন্তু নিজের উইকেট আর ফেরত তো পাচ্ছেন না তিনি।

বিতর্কিত আউটের ম্যাচে বাংলাদেশের জয় তিন উইকেটের। ওয়ানডেতে নয়বারের দেখায় এ নিয়ে লঙ্কানদের তৃতীয়বার হারিয়েছে টাইগাররা। তবে বিশ্বকাপে চতুর্থবারের দেখায় এসেছে প্রথম জয়। কিন্তু এই ম্যাচের ফল ছাপিয়ে গেছে সাকিবের কাণ্ড ও ম্যাথুসের আউটের ঘটনায়। লঙ্কান অলরাউন্ডার তো সাকিব ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওপর ক্ষোভ উগড়ে দিলেন।

ম্যাথুস বলেছেন, ‘আমার কোনো ভুল হয়নি। ক্রিজে গিয়ে তৈরি হতে আমার হাতে দুই মিনিট সময় ছিল। কিন্তু আমার হেলমেটে ত্রুটি দেখা দেয়। অবশ্যই আমি আমার সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ব্যাটিং করতে পারি না। তারা যদি এভাবে ক্রিকেট খেলতে চায় তাহলে আমি বলব এটা সাকিব ও বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য লজ্জাজনক।’

প্রতিপক্ষ ছাড়াও আম্পায়ারদের একহাত নিয়েছেন ম্যাথুস। ম্যাথুসের দাবি, ‘আমি যদি দেরি করতাম, যদি দুই মিনিট পেরিয়ে যেত তাহলে মেনে নিতাম। নিয়ম হচ্ছে দুই মিনিট পার হলে আউট হবে। আমার হেলমেটে সমস্যার পরও পাঁচ সেকেন্ড সময় বাকি ছিল। আম্পায়ার আমার কোচকে বলেছেন, হেলমেট যে ভেঙেছে এটা নাকি তারা দেখেননি।’

লঙ্কান অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার ধুয়ে দিয়েছে ম্যাচকর্তাদের। তার ভাষায়, ‘এটা কাণ্ডজ্ঞানের অভাব। মানকাডিং বা অবস্ট্রাকটিং ফিল্ড আউট নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এটা নিয়ে আমার আপত্তি থাকবেই। আমি সময়ের আজেই ক্রিজে গিয়েছি। এরপর আমার হেলমেটে সমস্যা দেখা দিলো। আমি ইচ্ছে করে সময় নষ্ট করিনি। এটা সত্যিই লজ্জাজনক।’

এই ঘটনার পর বাংলাদেশের প্রতি ম্যাথুসের দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টে গেছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘যে আপনাকে সম্মান করে তাকেই সম্মান দেখানো উচিত। তাদের খেলাটির প্রতি সম্মান রাখা উচিত। আমরা সুন্দর এই খেলাটির প্রতিনিধিত্ব করি। আম্পায়ারসহ আপনি যদি সম্মান না করেন, কাণ্ডজ্ঞান কাজে না লাগান তাহলে আর কিছু বলার থাকে না। আজকের পর থেকে বাংলাদেশের প্রতি আমার আগের সম্মানটা থাকবে না।’