লায়ান আল-বাজের চিৎকার: আমি আমার পা ফেরত চাই

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হতাহতের পাশাপাশি অসংখ্য শিশু পঙ্গু হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে ১৩ বছর বয়সী লায়ান আল-বাজ, ১৪ বছর বয়সী লামা আল-আঘা, ১৪ বছর বয়সী আহমেদ আবু শাহমাহ অন্যতম।

ফুটবল খেলছে ইসরায়েলি হামলায় পঙ্গু শিশুরা

লামিয়া আল-বাজের গল্প

গত সপ্তাহে খান ইউনিসে তার মেয়ে ইখলাসের একটি সন্তান জন্ম হয়। তাকে সাহায্য করতে সে বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন লামিয়ার পরিবার। ইসরায়েলি নির্বিচার হামলার একটি বোমা গিয়ে বিস্ফোরিত হয় ওই বাড়িতে। এতে মারা যায় নবজাতকসহ ইখলাস, ইখলাসের আরও দুই সন্তান, ইখলাসের বোন খিতাম। লামিয়া জানান, ইসরায়েলি হামলায় তাদের মৃতদেহ টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। আমি খিতামকে চিনেছি তার কানের দুল দেখে। আর ইখলাসকে চিনতে পেরেছি তার পায়ের আঙ্গুল দেখে।

এছাড়া আহত হয় আরও কয়েকজন, যাদের একজন ১৩ বছর বয়সী লায়ান আল-বাজ। তাকে হাসপাতালে আনার পর থেকে ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের অবরোধের কারণে হাসপাতালগুলোতেও প্রায় সব ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম শেষ হয়ে এসেছে। লায়ানকেও তার পুরোটা সময় ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এর প্রভাব কেটে গেলেই সে তার পায়ের জন্য চিৎকার করতে শুরু করে।

হাসপাতালের বেডে লায়ান

হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে থাকা বাজ চোখ খুললেই দেখতে পায়, তার জন্য রাখা আছে কৃত্রিম পা। তখনই সে চিৎকার করে ওঠে, আমি কোনো মিথ্যা পা চাই না। আমাকে আমার পা ফিরিয়ে দেওয়া হোক। মুখ, হাতসহ সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন নিয়েও সে প্রশ্ন করে, আমার বন্ধুরা তো হাঁটছে। আমি কেন হাঁটতে পারছি না। আমি তাহলে কীভাবে স্কুলে যাব?

লামিয়ার মেয়ে লায়ান আল-বাজের গল্প

হামলায় আহত হয় আরও কয়েকজন, যাদের একজন ১৩ বছর বয়সী লায়ান আল-বাজ। তাকে হাসপাতালে আনার পর থেকে ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের অবরোধের কারণে হাসপাতালগুলোতেও প্রায় সব ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম শেষ হয়ে এসেছে। লায়ানকেও তার পুরোটা সময় ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এর প্রভাব কেটে গেলেই সে তার পায়ের জন্য চিৎকার করতে শুরু করে।

লামার গল্প

একটি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দেখা মেলে ১৪ বছর বয়সী লামা আল-আঘা এবং তার বোন ১৫ বয়সী সারার। ইসরায়েলি হামলায় তাদের জমজ সহোদর সামা ও ইয়াহিয়া নিহত হয়েছে। লামার পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তবে সে লায়ানের মতো হতাশ নয়। সে জানায়, আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি কিন্তু আমি আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমি তো এখনও বেঁচে আছি। আশা করছি আমি একটি কৃত্রিম পা পাব এবং আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারব, যাতে আমি আমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।

আহমেদের গল্প

একই রকম পা হারানো ১৪ বছর বয়সী আহমেদ আবু শাহমাহ খান ইউনিসে ক্র্যাচ ব্যবহার করে হাঁটছে। এখানেই তার বাড়ি। কিন্তু তার বাড়িতে চালানো ইসরায়েলি হামলায় তাদের বাড়িটি ধ্বংস হয়ে যায়। হামলায় তার ছয় চাচাতো ভাই ও চাচী নিহত হন।

আবু শাহমাহ জানায়, আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। জ্ঞান ফেরার পর আমি অনুভব করি, আমার পা নেই। আমার ভাইকে জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে তারা বলেছিলেন, এটি ঠিক জায়গাতেই আছে। অ্যানেস্থেশিয়ার কারণে অনুভব করতে পারছি না। পরে অবশ্য তারা আমাকে সত্য কথাটি বলে দেয়।

আবু শাহমাহ জানায়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই সে একটি ফুটবল একাডেমিতে নিবন্ধন করিয়েছিল। শাহমাহ বার্সেলোনার কড়া সমর্থক। অন্যদিকে তার চাচাতো ভাইয়েরা রিয়াল মাদ্রিদের পাড় ভক্ত। তবে তার চাচাতো ভাইদের একজন ফরিদ বলেছেন, যদি আবু শাহমাদ তার পা ফিরে পায়, তাহলে তিনি রিয়াল ছেড়ে দিতে রাজি এবং তার মতো বার্সেলোনার ভক্ত হয়ে যেতেও তার কোনো আপত্তি থাকবে না।

হাসপাতালের পরিচালক নাহেদ আবু তায়েমা বলেন, প্রতিদিন প্রচুর আহত লোকজন হাসপাতালে আসছেন। কিন্তু তাদের হাতে চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় রোগীদের জীবন-হুমকির জটিলতা রোধ করতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা ছাড়া তাদের সামনে তেমন কোনো উপায় থাকে না। কারণ আমাদের তখন একজন রোগীর জীবন বাঁচাতে বা তাদের আহত পা বাঁচানোর চেষ্টা করার সময় ঝুঁকিতে ফেলার মধ্যে একটি বেছে নিতে হয়।