বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হলো গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান সংবলিত একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। শুক্রবার সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ওই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হলে তা ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হয়। এ প্রস্তাবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাস ও নির্বিচার হামলাসহ’ সব ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়। একই সঙ্গে বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা ও বাধাহীন ত্রাণসহায়তার আহ্বান জানানো হয় প্রস্তাবটিতে। খবর আল জাজিরা।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ

সাধারণ পরিষদে গতকাল শুক্রবার আরব দেশগুলোর পক্ষে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে জর্ডান। ১৯৩ সদস্যের পরিষদে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে পরিষদের ১২০ সদস্য। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ১৪ সদস্য। অপরদিকে ৪৫ সদস্য ভোটদানে বিরত ছিল। ‘না’ ভোট দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। নিরাপত্তা পরিষদের মতো সাধারণ পরিষদে ভেটোর কোনো ব্যবস্থা নেই।

একই সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের মতো এখানে কোনো প্রস্তাব পাস হলে তা কার্যকর করার কোনো ব্যবস্থাও নেই। ফলে সাধারণ পরিষদে কোনো প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর তা মেনে চলার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতাও নেই। তবে বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশ এই পরিষদের সদস্য হওয়ায় এখানে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলোর একটি নৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজা

ভোটের আগে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেন, এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়া মানে এই যুক্তিহীন যুদ্ধকে, যুক্তিহীন হত্যাকাণ্ডকে অনুমোদন করা। অন্যদিকে না ভোট দেওয়া ইসরায়েল এই ভোটাভুটিকে ‘কলঙ্ক’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

প্রস্তাবটিতে অবিলম্বে টেকসই ও স্থায়ী মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়, যা বৈরিতার অবসান ঘটাবে। এছাড়া ফিলিস্তিনি জনগণকে বাধ্যতামূলকভাবে উচ্ছেদের যেকোনো প্রয়াস দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়। কানাডা ওই প্রস্তাবে হামাসের নিন্দা জানানোর বিষয়টি যুক্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনের অভাবে তা গৃহীত হয়নি।

সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবটিতে চলমান সংঘাতের সময় জিম্মি বেসামরিক ব্যক্তিদের ‘অবিলম্বে ও নিঃশর্ত’ মুক্তি দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের নিরাপত্তা, সুস্থতা নিশ্চিত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।

উল্লেখ্য, পাল্টাপাল্টি ভেটোর জেরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় ইসরায়েলি হামলা থামাতে ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি ভেটোর কারণে ভণ্ডুল হয়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটে সাধারণ পরিষদে এই প্রস্তাব পাস হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সাত হাজার ৩২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬৬ শতাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অভিযানে ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অপর দিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় সেখানকার এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন।