স্ত্রী-পরিবার হারিয়েছেন, তবুও গাজা ছাড়বেন না আল-জাজিরার সাংবাদিক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন কাতারভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার ব্যুরো প্রধান ওয়ায়েল আল-দাহদুহের স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও নাতি। গতকাল বুধবার (২৫ অক্টোবর) ওয়াদি গাজার দক্ষিণে নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় তারা নিহত হয়। খবর আনাদোলু, আল জাজিরা।

আহত নাতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন ওয়ায়েল আল দাহদুহ

খবরে জানা গেছে, আল জাজিরার প্রবীণ সাংবাদিক ওয়ায়েল ইয়ারমুক থেকে এ ধরনের হামলা নিয়ে প্রতিবেদন করছিলেন। সে সময়ই নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে চালানো হামলায় তার পরিবারের সদস্যরা নিহত হন। হামলায় প্রথমে তার স্ত্রী, ছেলে মাহমুদ ও মেয়ে শাম নিহত হন। এর দুই ঘণ্টা পর তার এক নাতি আদমকেও মৃত ঘোষণা করা হয়।

নিহতদের দেখে বেরিয়ে আসার পথে শোকাহত ওয়ায়েল বলেন, আজ নুসিরায় যে হামলা হলো, সেটি আসলে শিশু, নারী ও বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করে চালানো ইসরায়েলের সিরিজ হামলার অংশ। আমরা আগেই সন্দেহ করছিলাম, ইসরায়েল এসব জায়গাতেও হামলা চালাতে পারে। অথচ এসব জায়গাকে নিরাপদ ঘোষণা দিয়েছিল দখলদার বাহিনী।

ওয়ায়েল আল দাহদুহ

ওয়ায়েল দাহদুহ আরও বলেন, এর আগে দেওয়ার ইসরায়েলের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তার পরিবারকে দক্ষিণ গাজা থেকে সরিয়ে উত্তর গাজার বাড়িতে সরিয়ে নিয়েছিলেন। অথচ সেখানেই তাদেরকে টার্গেট করে হত্যা করা হলো। গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে গাজায় ইসরায়েলি হামলার নৃশংসতা তুলে ধরার অপরাধে তার পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়ায়েল দাহদুহ।

এই ঘটনার পর এক বিবৃতিতে আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক জানায়, দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচারে বোমা হামলায় সাংবাদিক ওয়ায়েলের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তার পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন।

আল জাজিরার আরবি বিভাগের প্রযোজক সাফওয়াত আল-কাহলুত বলেন, ওয়ায়েলের পরিবার গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বিখ্যাত পরিবারগুলোর অন্যতম। আর ওয়ায়েলকে ‘গাজার কণ্ঠস্বর‘ উল্লেখ করে বলেন, সত্য রিপোর্ট করার জন্য তাকে এত বড় মূল্য দিতে হলো।

আল জাজিরার আরবি উপস্থাপক তামের আলমিশাল বলেছেন, ওয়ায়েল দাহদুহ সাংবাদিকতার জগতে বিখ্যাত একটি নাম। তিনি বছরের পর বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণ, নারী ও শিশুদের হত্যা, সাংবাদিক হত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কভার করে আসছিলেন। সর্বশেষ ইসরায়েলি হামলায় তার পরিবার আক্রান্ত হওয়ার পরও ওয়ায়েল ইসরায়েলি নৃশংসতার বিষয়ে রিপোর্ট করা অব্যাহত রেখেছেন। সেখানে যা ঘটছে তা বিশ্বকে জানানোর জন্য তিনি গাজা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

আলমিশাল বলেন, আমরা এটা নিশ্চয়তা দিতে পারি, তার আওয়াজ অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে আমাদের সমস্ত কণ্ঠস্বর চলবে, এবং আমরা প্রতিদিন সত্য প্রকাশ করে যাবো।