গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করেনি ইসরায়েল, খান ইউনিসে নিহত ১২

গাজার আল আহলি আরাবি হাসপাতালে বোমা হামলায় অন্তত ৫০০ জন নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার মধ্যেও বিমান হামলা থামায়নি ইসরায়েল। বুধবার (১৮ অক্টোবর) দিনের বেলাতেই গাজার খান ইউনিস এলাকায় একটি বহুতল ভবন বোমায় গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বিমান। তাৎক্ষণিক সেখানে ১২ জনের মৃত্যু ও ৪০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।

গাজার হাসপাতালে বোমা হামলায় আহত ফিলিস্তিনি নারীর আহাজারি

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস গত ৭ অক্টোবর আকস্মিকভাবেই ইসরায়েলে ঢুকে হামলা চালায়। হামাসের বন্দুকধারীদের হামলায় একদিনেই ইসরায়েলে ১৪০০ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলি মিডিয়ার। ওইদিন থেকেই গাজায় দিনে-রাতে অনবরত বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ১২ দিনে ইসরায়েলি বিমান থেকে বোমা হামলায় ৩ হাজার ৪৫০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বোমায় বিধ্বস্ত হয়েছে দেড় হাজারের মতো বাড়ি। ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ বাসিন্দা।

সর্বশেষ ভয়ানক হামলাটি হয় গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত আটটার দিকে। গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত আল আহলি আরাবি হাসপাতাল বোমায় গুঁিড়য়ে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। গত কয়েকদিনে আহত শত শত মানুষ ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আহতদের পাশাপাশি নিরাপদ ভেবে হাসপাতাল ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাস্তুহারা আরও চার হাজারের বেশি মানুষ। তাদেরই ওপর ফের বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালে বোমায় অন্তত ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে দেড় হাজারের মতো। এছাড়া হাসপাতাল ভবনের ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে আছেন অসংখ্য মানুষ।

বুধবারও ধ্বংসস্তুপ থেকে আটকেপড়া বেশ কয়েকজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বোমায় খণ্ডবিখণ্ড দেহও উদ্ধার করে আনেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

হাসপাতালে বোমা হামলার পাশাপাশি ওইদিন জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুল কাম আশ্রয়কেন্দ্রেও বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ওই স্কুলেও বেশ কয়েকজন নিহত হয়।

ইসরায়েলি বোমায় হাসপাতাল,স্কুল ও আশ্রয় কেন্দ্রও রেহাই না পাওয়ায় বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তীব্র নিন্দা জানান জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। দেশে দেশে হয়েছে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ।

তা সত্ত্বেও বোমা হামলা বন্ধ করেনি ইসরায়েল। বুধবার গাজার খান ইউনিস অঞ্চলে একটি আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বিমান। ওই বাড়িতে অর্ধশত লোক আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৪৪ জন।

বাইডেন বললেন হাসপাতালে হামলা ইসরায়েল চালায়নি: ইসরায়েল ও হামাসের সংঘাতের মধ্যেই ইসরায়েলের প্রতি সংহতি জানাতে বুধবার তেলআবিব গিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তেলআবিব শহরে পৌঁছেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করেন বাইডেন। গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বাইডেন হাসপাতালে হামলার জন্য ‘ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করেন।

নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে বাইডেন বলেন, হাসপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনায় আমি খুবই মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। আমার মনে হয়েছে, ইসরায়েল নয়, এ হামলা করেছে অন্য কোনো পক্ষ। বাইডেন বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, হামাস ফিলিস্তিনি সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না। অথচ তারা ফিলিস্তিনের জন্য কেবল দুর্ভোগই নিয়ে এসেছে।

গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ: বিমান হামলার পাশাপাশি গত ১২ দিন ধরেই খাবার, পানি, গ্যাস বিদ্যুত বন্ধ করে পুরো গাজাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এতে খাবার, পানি ও ওষুধের অভাবে সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সবগুলো সীমান্ত গেট বন্ধ করে গাজায় কোনো বিদেশি ত্রাণও ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল।

এমন পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলে আখ্যায়িত করেছে ইউনিসেফ। সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কার্যালয়ের মুখপাত্র সালিম ওয়েইস বলেন, গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়ানক অবস্থায় পৌঁছেছে। গাজায় বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে নিরাপদ। তিনি বলেন, এখনি সংঘাত বন্ধ করে গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা উচিত।