'বাইডেনের ইসরায়েল সফর ভয়ানক জুয়াখেলা’

গাজার হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই আজ বুধবার (১৮ অক্টোবর) তেল আবিব সফরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এমন সময়ে বাইডেনের এ সফরকে বিরল ঘটনা হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বাইডেনের এই সফর একটি ভয়ানক পর্যায়ের ‘জুয়াখেলা’ ছাড়া কিছুই নয়। খবর বিবিসির।

সংঘাতের মধ্যেই ইসরায়েল যাচ্ছেন বাইডেন

গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত আল আহলি আরব হাসপাতালে বোমা হামলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অন্তত ৫০০ মানুষ নিহত হয়। আহত হয়েছে আরও হাজারের বেশি মানুষ। হাসপাতালের মতো জায়গায় ইসরায়েলের ন্যাক্কারজনক বোমা হামলা এবং এতসংখ্যক মানুষ নিহতের এ ঘটনায় চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি নিশ্চিত করেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুধবার সকালে (বাংলাদেশ সময় আজ সন্ধ্যা) তেল আবিবে যাচ্ছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।

মূলত ইসরায়েলে গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি হামাসের আকস্মিক হামলায় ১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩১ মার্কিন নাগরিকও রয়েছে। ওই ঘটনায় মিত্র ইসরায়েলকে সংহতি জানাতেই সেখানে যাচ্ছেন বাইডেন।

যদিও হামাসের হামলার পর থেকেই গাজায় অনবরত বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে গাজার অন্তত সাড়ে ৩ হাজার বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছেন। ইসরায়েলি বোমায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজার হাজার হাজার বাড়িঘর।

সর্বশেষ গাজার হাসপাতালও রেহাই পেল না ইসরায়েলি বোমার আঘাত থেকে। এ কারণেই বাইডেনের এ সফর সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তাছাড়া তার নিরাপত্তার বিষয়টিও এখানে একটি ইস্যু।

বিবিসির ‍উত্তর আমেরিকা বিষয়ক সম্পাদক সারাহ স্মিথ বলেছেন, একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য একটি যুদ্ধক্ষেত্রে সফরে যাওয়া বিরল ঘটনা। এটি হতে পারে তার ভয়ানক পর্যায়ের জুয়াখেলা।

মধ্যপ্রাচ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন চেয়েছিলেন দুইপক্ষের মধ্যে একজন স্বচ্ছ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হতে। সেজন্যই হয়ত হামাসকে নির্মূলের কথা বললেও ‘গাজায় ইসরায়েলের দখলদ্বারিত্ব বড় ভুল হবে’ মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তাছাড়া অবরুদ্ধ গাজায় খাবার-পানি সরবরাহের কথাও বলছে যুক্তরাষ্ট্র।

এ সম্পর্কে সারাহ বলেন, বাইডেনের এ তড়িঘড়ি সফর যদিও ইসরায়েলের প্রতি তার সংহতি জানানোই লক্ষ্য, তিনিও হামাসকে নির্মূল করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু একদিকে ইসরায়েলের প্রতি সংহতি এবং অন্যদিকে গাজায় বেসামরিক মানুষের জীবন ও মানবিক বিপর্যয় নিয়ে একটি ভারসাম্য তিনি রক্ষা করতে পারতেন।

এদিকে ইসরায়েল সফর শেষে বাইডেনের জর্ডান যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও মিশরের প্রেসিডেন্ট ফাত্তাহ আল সিসির সঙ্গে তার বৈঠক করার কথা ছিল।

তবে গাজার হাসপাতালে বোমা হামলার প্রতিবাদে জর্ডানে বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মাহমুদ আব্বাস ও আল সিসি। দুই নেতা জর্ডান থেকে বাড়ির পথে রওয়ানা দিয়েছেন। এতে গাজা ঘিরে চলমান সংকটের সমাধানের পথও আরও জটিল হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সারাহ স্মিথ বলেন, একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের জন্য এখন উচিত ছিল তার সবটুকু প্রভাব দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে রক্তপাত ও প্রাণহানি কমিয়ে আনা এবং সবধরনের সংঘাত বন্ধ করা। তবে বাইডেনের এ সফর সবকিছুকে আরও কঠিন করে তুলছে।