হামাসের ‘আড়াই বছরের পরিকল্পনা’, বোকা বনে গেল মোসাদ

৭ অক্টোবরের ভোরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে হামলা চালায় তা ছিল একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এ হামলায় হামাস ইসরায়েলের নাকের ডগায় বসে আড়াই বছর ধরে পরিকল্পনা করে এবং তাতে তারা সফল হয়। এ হামলায় মোসাদ রীতিমতো বোকা বনে যায়।

ইসরায়েল হামলা ও মোসাদ 

সমর বিশেষজ্ঞেরা হামাসের গাজা থেকে ইসরায়েলে ৫,০০০টি রকেট নিক্ষেপের ঘটনাকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের জন্য একটি বড় ব্যর্থতা বলে মনে করছেন।

সমর বিশেষজ্ঞদের মতে, হামাসের এই হামলার সাফল্যের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, হামাস একটি অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং দক্ষ গোষ্ঠী। তারা ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের মতোই দক্ষতার সাথে গোপন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছে। তারা ইসরায়েলের গোয়েন্দা ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে জানে এবং তার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে পারে।তৃতীয়ত, হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তুলেছে।

হামাসের এই হামলা ইসরায়েলের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। এ হামলায় ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। এ হামলার পর ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালায়। এই পাল্টা হামলায় গাজায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং শত শত বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।

হামাসের এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এ হামলার ফলে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।

হামাসের এই হামলার সাফল্যের পেছনে আরও কিছু নির্দিষ্ট কারণ

হামাস ইসরায়েলের গোয়েন্দা ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিল। হামাস জানতে পেরেছিল যে ইসরায়েলের গোয়েন্দা ব্যবস্থা গাজার অভ্যন্তরে হামাসের গোপন কর্মকাণ্ডের ওপর খুব বেশি নজর দেয় না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে হামাস ইসরায়েলের নাকের ডগায় বসে আড়াই বছর ধরে হামলার পরিকল্পনা করে।

হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর জন্য একটি নতুন ধরনের রকেট তৈরি করেছিল। এই রকেটগুলো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ছিল।

হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করেছিল। হামাস তার লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোকে বেছে নিয়েছিল। এতে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষতি হয়েছিল।

রয়টার্সের প্রতিবেদন

রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০২১ সালের মে মাসে ইসরায়েল হামলা চালিয়ে ৩০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। মূলত তার পর থেকেই এর প্রতিশোধের পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে থাকেন কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফ। আড়াই বছরের পরিকল্পনার সফল প্রয়োগ হয় গত শনিবার। মাত্র ২০ মিনিটে পাঁচহাজার রকেট ছুড়ে ইসরায়েলের একাধিক জনপদ বিধ্বস্ত করে দেয় তার বাহিনী। অপ্রতিরোধ্য মনে করা স্থলসীমান্ত পার হয়ে সশরীরেও হামলা করেছে কাসাম ব্রিগেডের সদস্যরা। এ হামলায় জান-মাল উভয় দিক দিয়েই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইসরায়েল।

দেইফ

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ হামলার পরিকল্পনায় দেইফের সঙ্গে ছিলেন গাজায় হামাসের প্রধান নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারও। এছাড়া আর হাতে গোণা কয়েকজন এ পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ হামলার ব্যাপারে প্রায় কিছুই জানতো না। ওই নিশ্ছিদ্র গোপনীয়তার কারণেই ইসরায়েলি গোয়েন্দারা মোসাদ বোকা বনে যায়। কোনো সোর্স থেকেই ইহুদিদের পবিত্র দিবস সিমহাত টোরায় ফিলিস্তিনিদের এমন প্রত্যাঘাতের কোনো আঁচই পায়নি তারা।

২০ বছর আগে বিমান হামলায় এক চোখ, এক হাত এবং এক পা হারিয়ে কোনোভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন দেইফ। স্ত্রী, ভাই, সন্তানসহ অনেককে হারিয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়। এক সময় হুইলচেয়ারের ওপর নির্ভরশীল এই দেইফের ওপরই চাপে কাসসাম ব্রিগেডের প্রধানের দায়িত্ব।