ইসরায়েলের মূর্তমান আতঙ্ক, কে এই দায়েফ?

মোহাম্মদ দায়েফ। এক চোখ, এক পা এবং এক হাতবিহীন এই ব্যক্তিই নাকি ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের হামলার মাস্টারমাইন্ড। গত দুই-তিনদিনের হামলায় গাজা লণ্ডভণ্ড করে ফেললেও দায়েফের দেখা পায়নি ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে তাদের আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে। খবর এবিপি।

মোহাম্মদ দায়েফ, ফাইল ছবি

হামাসের সামরিক শাখা আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ দায়েফ। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে গাজার খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরে জন্ম দায়েফের। দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারে বড় হলেও গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে অর্জন করেন স্নাতক ডিগ্রি।

২০০২ সালে ইসরায়েলি হামলায় হামাসের সামরিক শাখা আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের সালেহ শাহেদি নিহত হলে এ ব্রিগেডের প্রধান নিযুক্ত হন দায়েফ। তাকেও হত্যার জন্য এ পর্যন্ত পাঁচবারের বেশি হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে হারিয়েছেন তিনি। একটি করে চোখ, হাত ও পা-ও হারিয়েছেন তিনি। কিন্তু হারাননি মনোবল। এ কারণে হুইল চেয়ারে বসে চলাফেরা করা এই ফিলিস্তিনি এই যোদ্ধা ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য মূর্তমান ত্রাস।

ফিলিস্তিনের পতাকা

ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে দায়েফের লড়াই সেই কিশোরকাল থেকেই। ১৯৭৩ সালে কিশোর বয়সে তিনি প্রথমবারের মতো আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিনের হয়ে লড়াই করেন। এরপরের লড়াইগুলোতেও তিনি অংশ নেন সক্রিয়ভাবে। দায়েফ হামাসের প্রথম রকেট তৈরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পাশাপাশি রকেটেরও নকশা করেছেন তিনি। ইসরায়েলে হামলা চালাতে হামাসের কাছে এটি প্রধান অস্ত্র বলেই বিবেচিত হয়। ধারণা করা হয়, হামাসের কাছে এখন দশ হাজার রকেট রয়েছে।

হামাসের এই পঙ্গু নেতাকে ইসরায়েল খুঁজছে কয়েক দশক ধরে। তেলআবিবের মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকাতেও তিনি শীর্ষে রয়েছে। কিন্তু তাকে চোনাটাই মুশকিল। কারণ দায়েফকে তার পরিবার এবং সংগঠনের কয়েকজন সদস্য ছাড়া তেমন কেউ চেনে না। এমনকি গাজার অনেক বাসিন্দাও তাকে দেখলে চিনতে পারেন না।

এছাড়া মোহাম্মদ দায়েফ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী বলেই খ্যাতি লাভ করেছেন। গত নয় বছরে তিনি মাত্র তিনটি বিবৃতি দিয়েছেন। ইন্টারনেটেও তার তেমন কোনো ছবি নেই। তবে গত শনিবার (৭ অক্টোবর) ইসরায়েলে হামাসের হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রকাশিত ভিডিও বার্তার পেছনের কণ্ঠস্বরটি ছিল দায়েফের।

ওই ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অপরাধ, বসতিস্থাপনকারীদের নৃশংসতা, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং তাদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ‘আল আকসা ফ্লাড’ অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সময় তিনি গত ১৬ বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলিদের নানা অপকর্মের খতিয়ান তুলে ধরেন। ওই ভিডিওবার্তার পেছনের ব্যক্তিটিকে চিনতে পেরেছে ইসরায়েলও। কিন্তু তাকে খুঁজে পায়নি।

গাজার আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাখাইমার আবুসাদ মোহাম্মদ দায়েফের ব্যাপারে বলেন, তিনি হামাস ও ফিলিস্তিনি উভয়ের কাছেই খুব সম্মানিত। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এ হামলার সফলতা তরুণ সমাজে তাকে আরও বেশি শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত করবে।