এবার সাহিত্যে নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যাদের
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রতি বছরের মতো এবারও সাহিত্যে কে নোবেল পুরস্কার পাবেন তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই বিশ্ববাসী জানতে পারবে সাহিত্য জগতের সবচেয়ে মর্যাদাবান পুরস্কারটি কোন ভাগ্যবান লেখক পেতে যাচ্ছেন। ৫ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবারের নোবেল মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানো কোনো একজন লেখকের ভাগ্যেই রয়েছে।
এবারও সাহিত্যে কে নোবেল পুরস্কার পাবেন তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে...
এবারের সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ী হিসাবে উল্লেখ করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ান লেখক লুদমিলা উলিতস্কায়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে।
গত বছর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদিও ২০২৩ সালের নোবেল বিজয়ী হতে পারেন বলে অনেকেই ধারণা করছেন। ইরানের একটি ফতোয়ার কারণে বছরের পর বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। ১৯৮৮ সালে লেখা বিতর্কিত বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ এর জন্য তার মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া দিয়েছিলেন ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
এছাড়া সুইডিশ একাডেমি হয়তো স্বল্প পরিচিত লেখক বা জাতিগত বৈচিত্র্যের জন্য একদম অপরিচিত এমন কাউকে নোবেলের জন্য বেছে নিতে পারে। অতীতে প্রায়শই এ ধরনের কাজ করতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটিকে। সেই হিসেবে চীনের অ্যাভান্ট-গার্ড কথাসাহিত্যিক এবং সাহিত্য সমালোচক ক্যান শুয়ে এর নাম বলা যেতে পারে। তার মতো একজন কম পরিচিত লেখককেও নোবেল দিয়ে বিশ্ববাসীকে চমকে দিতে পারে সুইডিশ একাডেমি। প্রসঙ্গত, শিল্প, সঙ্গীত, বা সাহিত্যে নতুন এবং পরীক্ষামূলক ধারণা এবং পদ্ধতিকে অ্যাভান্ট-গার্ড বলা হয়।
সুইডিশ দৈনিক সভেনস্কা দাগব্লাদেতের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক লিসা ইরেনিয়াস বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘জার্মানিতে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা উলিতস্কায়াকে সম্মান জানানো হলে সাহিত্য রাজনীতি থেকে মুক্ত বলে মনে হবে।'
তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য যখন রাশিয়াকে নিন্দা করা হচ্ছে, এমন সময়ে রাশিয়ান সংস্কৃতিকে পুরস্কৃত করা একটি সাহসী পদক্ষেপ হবে।'
সুইডেনের প্রধান একটি সংবাদপত্র দাগেনস নিহিতের এর সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক বিয়র্ন উইম্যান জানিয়েছেন, উলিতস্কায়াকে পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া হবে।
উইম্যান মনে করেন ক্যারিবিয়ান-আমেরিকান লেখক জ্যামাইকা কিনকেডের এই বছর নোবেল পাওয়ার একটি সুযোগ রয়েছে। কিনকেডের উপন্যাসগুলো তার নিজের পারিবারিক জীবন, ঔপনিবেশিকতা এবং জাতিগত অভিজ্ঞতার উপর লেখা হয়েছে।
তবে উইম্যান সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন যদি পুরস্কারটি সালমান রুশদি পান। তিনি বলেছেন, ‘এখনই সময় তার জেতার। যদি তা ঘটে তবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য সুইডিশ একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাব। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মূর্ত করে তোলেন রুশদি।'
সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীদের তালিকায় পশ্চিমা শ্বেতাঙ্গ পুরুষ লেখকদের আধিক্য দেখতে পাওয়া যায়। শ্বেতাঙ্গ পুরুষ লেখকদের প্রতি সুইডিশ একাডেমির এই পক্ষপাতিত্বের কারণে প্রতিষ্ঠানটি এর আগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
এছাড়া ২০১৯ সালে অস্ট্রিয়ার গণহত্যা অস্বীকারকারী লেখক পিটার হ্যান্ডকে কে নোবেল দেওয়ার কারণেও সুইডিশ একাডেমির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন পশ্চিমা সাংবাদিকরা। কারণ তিনি বসনিয়ার গণহত্যা অস্বীকার করেছেন এবং এই গণহত্যার হোতা সার্বিয়ান প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিচের সমর্থক ছিলেন।
এই ঘটনার পর নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা করছে সুইডিশ একাডেমি। গত বছর ফরাসি নারীবাদী লেখক অ্যানি এরনোকে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালে তানজানিয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক আব্দুলরাজাক গুরনাহ নোবেল পেয়েছিলেন। তার লেখায় অভিবাসন, উপনিবেশবাদ এবং বর্ণবাদের যন্ত্রণা অন্বেষণ করার জন্য তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
স্টকহোম ইউনিভার্সিটির সাহিত্যের অধ্যাপক কারিন ফ্রানজেন এএফপিকে বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষ আরও সচেতন হয়েছে। এখন আপনি ইউরোকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে থাকতে পারবেন না, পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সমতা থাকতে হবে এবং এতে সময়ের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।'
উইম্যান উল্লেখ করেছেন, হ্যান্ডকে কে নোবেল দেওয়ার পর সমালোচনার কারণে ১৮ সদস্যের সুইডিশ একাডেমির অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। সদস্যদের অনেকেই পদত্যাগ করেছেন। দাগেনস নিহিতের সংস্কৃতিবিষয়ক এই সম্পাদক বলেছেন, ‘সত্যিই একাডেমির পরিবর্তন হয়েছে।'
লেখক, ইতিহাসবিদ, দার্শনিক এবং ভাষাবিদদের সমন্বয়ে গঠিত সুইডিশ একাডেমির বেশ কিছু সদস্য এখন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সমতার উপর সেমিনার আয়োজন করছেন। এছাড়া সুইডিশ সংবাদপত্রে মতামত প্রকাশ করছেন। এর আগের রক্ষণশীল সদস্যদের তুলনায় এখন অনেক বেশি প্রগতিশীল সদস্য রয়েছে সুইডিশ একাডেমিতে। তারা খোলাখুলি মত প্রকাশ করছেন।
ইরানী বংশোদ্ভূত সুইডিশ কবি জিলা মোসায়েদ ২০১৮ সালে সুইডিশ একাডেমির নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তিনি নিয়মিত ইরানী শাসনের বিরোধিতা করেন। তিনি প্রকাশ্যে সিরিয়ার কবি অ্যাডোনিসের সাহিত্যিক গুণাবলীর প্রশংসা করেছেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ীর তালিকায় রয়েছেন সিরিয়ান এই কবি।
সুইডিশ পাবলিক রেডিও এসআর এর সাহিত্য সমালোচক লিনা কালমেটেগ জোর দিয়ে বলেছেন, ‘তবে একাডেমি কাকে নোবেলের জন্য বিবেচনা করছে তা অনুমান করা এখনও খুব কঠিন।'
এদিকে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবার হয়ত রোমানিয়ান লেখক মির্চা কার্তারেস্কু, হাঙ্গেরির পিটার নাদাস এবং লাজলো ক্রাসনাহোরকাই, আলবেনিয়ার ইসমাইল কাদারে, কেনিয়ার লেখক এনগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো এবং কানাডার মার্গারেট অ্যাটউড পেয়ে যেতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ এই পুরস্কারটি।
নোবেল পুরস্কারের ক্ষেত্রে জাতিগত বৈচিত্র্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সুইডিশ একাডেমি। এই কারণে লেখক নির্বাচনের জন্য বাইরের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও পরামর্শ করছে একাডেমির সদস্যরা। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লেখকদের কাজের ব্যাপারে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ট্যাবলয়েড এক্সপ্রেসেনের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক ভিক্টর মালম বলেছেন, ‘অন্যান্য ভৌগোলিক অঞ্চলের দিকে তাকানোর জন্য একাডেমি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাতে আমার ভয় হচ্ছে যে কে বিজয়ী হবেন তা আগে থেকেই আমরা অনুমান করতে পারবো না। এমনকি আপনার সাহিত্যে পিএইচডি থাকলেও এটা অনুমান করা সম্ভব হবে না।'
অবশ্য ভিক্টর মালম তার বাজি নরওয়েজিয়ান লেখক জন ফসে বা ডাগ সোলস্টাডের ওপর রাখছেন। তার ধারণা এবার হয়ত এই দুই জনের একজন পেয়ে যেতে পারেন বহুল কাঙ্খিত এই নোবেল পুরস্কার।
সূত্র: এএফপি
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.