হাতের তালুতে ভর দিয়েই কাবা তাওয়াফ করলেন সেই ঘানিম!

গত ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সালে, কাতারের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যুবক ঘানিম আল-মুফতাহ ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব যান। সেখানে তিনি হুইল চেয়ার বাদ দিয়ে হাতে ভর করে পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করেন। সবশেষ ফিফা বিশ্বকাপে মনোমুগ্ধকর কোরআন তেলাওয়াতে বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করেছিলেন ২১ বছর বয়সী ঘানিম আল মুফতাহ।

ঘানিম আল মুফতাহ

ঘানিম আল-মুফতাহ দুই পাবিহীন অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন ইউটিউবার ও উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ২০১৭ সালে তিনি কাতারের সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোক্তা খেতাব পান। ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ঘানিম গত কাতার বিশ্বকাপে ফিফার শুভেচ্ছাদূত মনোনীত হন।

ওমরাহ পালনের সময়, মসজিদে হারামের প্রশাসন তাকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। উপস্থিত নিরাপত্তা কর্মীরাও তাকে সাহায্য করেন এবং তার জন্য ইলেকট্রিক হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেন।

কিন্তু ঘানিম হুইল চেয়ার ব্যবহার না করেই স্বাচ্ছন্দ্যে কাবা শরিফ তাওয়াফ করেন। পরে অন্যদের সহযোগিতায় তিনি হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন।

কাবা শরিফ তাওয়াফের অনুভূতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আল্লাহ আমাকে পা না দিলেও শক্তিশালী দু’টি হাত দিয়ে কৃতজ্ঞ করেছেন। এ দুটি হাতই আমার জন্য পায়ের বিকল্প। আমি আল্লাহর দেয়া এ হাত দিয়েই বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছি।”

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঘানিম আল মুফতাহ

এ সময় তিনি পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার একটি আয়াতও তেলাওয়াত করেন, যার অর্থ, “আল্লাহ কাউকে তার শক্তির বেশি বোঝা দেন না।”

ঘানিম আল-মুফতাহ একজন অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব। তিনি তার প্রতিবন্ধকতাকে কখনোই বাধা হিসেবে দেখেননি। তার জীবনের গল্প হাজারো মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।

উল্লেখ্য, কডাল রিগ্রেশন সিনড্রোমে আক্রান্ত ঘানিম পরিবারের সাহায্যে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গঠন করেছেন। এ সংস্থাটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে হুইলচেয়ার প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে এবং তাদের হুইলচেয়ার সরবরাহ করে। ঘানিম আল-মুফতাহের স্বেচ্ছাসেবী কাজের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও রয়েছে তার ব্যাপক পদচারণা। সেখানে তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে পরিচিত। তার বক্তব্যের মাধ্যমে হাজারো মানুষ বাঁচার দিশা খুঁজে পায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেখানে তার ১০ মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে।

মানবদরদি ঘানিমকে ২০১৪ সালে কুয়েতের আমির শেখ শাবাহ আল আহমদ আল শাবাহ ‘শান্তির দূত’ নামে অভিহিত করেন।