ককেশাসে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছে ইরান

ককেশাস অঞ্চলে যেকোনো ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছে ইরান। ২ অক্টোবর, সোমবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এই তথ্য জানিয়েছেন। তুরস্ক এবং আজারবাইজান একটি স্থল করিডোর স্থাপনের পরিকল্পনা করায় তেহরান এই অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন প্রত্যাখ্যান করেছে।

নাসের কানানি

সোমবার নাসের কানানি বলেছেন, ‘ইরান এই অঞ্চলে যেকোনো ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে। এটিই আমাদের স্পষ্ট অবস্থান।’ প্রসঙ্গত, এখানে তিনি জাঙ্গেজুর স্থল করিডোরের কথা উল্লেখ করেছেন। এই করিডোরটি মূল ভূখন্ড আজারবাইজানকে তার স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র নাখচিভান এবং তারপরে তুরস্কের সঙ্গে যুক্ত করবে।

ইরান এবং আজারবাইজানের মধ্যে সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে তিক্ত ছিল। কারণ তুর্কি ভাষী আজারবাইজান ইরানের ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র।

গত মাসে মাত্র ২৪ ঘণ্টার লড়াইয়ে আর্মেনিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পরাজিত করে জাঙ্গেজুরের পূর্বে নাগোর্নো-কারাবাখ ছিটমহল পুনরুদ্ধার করে আজারবাইজান। তবে কিছু বিশেষজ্ঞের বিশ্বাস, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এখন নাখচিভানের সঙ্গে আঞ্চলিক সংযোগ তৈরি করতে দক্ষিণ আর্মেনিয়ায়ও অভিযান শুরু করতে পারেন।

১৯ সেপ্টেম্বর আজারবাইজান নাগর্নো-কারাবাখে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে। আজারবাইজানীয় বাহিনীর আক্রমণে তিন দশক ধরে এই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করা আর্মেনিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পরাজিত হয়। এরপর তারা নাগর্নো-কারাবাখ প্রজাতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালে আর্মেনিয়ার সামরিক বাহিনীর সহায়তায় তারা এই অঞ্চলটি দখল করেছিল।

নাখচিভান আজারবাইজানের অংশ কিন্তু মূল ভূখন্ডের সঙ্গে এই অঞ্চলের কোনো সীমান্ত নেই। এটি আর্মেনিয়া, তুরস্ক এবং ইরানের মধ্যে অবস্থিত।

জাঙ্গেজুর করিডোরটি ইরানের কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এই করিডোর দিয়ে আজারবাইজান নাখচিভানের সঙ্গে যুক্ত হলে ইরানের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হবে। এর ফলে আর্মেনিয়া এবং ইউরোপে ইরানের প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এদিকে ১ অক্টোবর রোববার আর্মেনিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সচিব, আরমেন গ্রিগরিয়ান তেহরান সফর করেন। সে সময় তিনি তার ইরানি প্রতিপক্ষ আলী আকবর আহমদিয়ানের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর এই মন্তব্য করেছেন কানানি। তিনি জানিয়েছেন, তারা দক্ষিণ ককেশাসের সর্বশেষ উন্নয়ন এবং এই অঞ্চলের সামরিক গতিবিধি নিয়ে আলোচনা করেছেন।  

নাগোর্নো-কারাবাখের কথা উল্লেখ করে কানানি বলেছেন, ‘আমরা সব সময়ই অধিকৃত এই অঞ্চল আজারবাইজানের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে সমর্থন জানিয়ে এসেছি।' 

ইরানের সঙ্গে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার সীমান্ত রয়েছে। দেশটিতে প্রায় ১ কোটি আজেরি সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে। পাশাপাশি ১ লাখ আর্মেনিয়ানও ইরানে বাস করে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে তেহরানে অবস্থিত আজারবাইজানের দূতাবাসে এক বন্দুকধারী হামলা চালায়। তিনি একজন কূটনীতিককে হত্যা করেন এবং দূতাবাসের দুই নিরাপত্তারক্ষীকে আহত করেন। এরপর থেকে আজারবাইজান ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়। 

এছাড়া ইরানের আশংকা চিরশত্রু ইসরায়েল আজারবাইজানি ভূখণ্ড ব্যবহার করে দেশটিতে হামলা করতে পারে। কারণ ইসরায়েল, আজারবাইজানের একটি প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। 

সূত্র: দ্য নিউ আরব