বিশ্বকাপ থেকে ‘বাদ পড়ার’ কারণ জানালেন তামিম

তামিম ইকবাল খানকে বলা হয় কলিজা ওয়ালা খান। সেটি প্রমাণ করলেন আরও একবার। আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে ফিটনেস ইস্যুতে বাদ দেওয়া হয় তামিমকে। শুধুই কি ফিটনেস ইস্যুতে বাদ তামিম? কয়েকদিন ধরে ক্রিকেট পাড়ায় ঘটে যাওয়া সব ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন খান সাহেব।

তামিম ইকবাল

বিশ্বকাপ খেলতে আজ বিকেল চারটায় দেশ ছেড়েছে বাংলাদেশ দল। এর আগে দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তামিম বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ জাতীয় দল ভারতের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আমি সবাইকে বিগত কয়েক দিনের ঘটে যাওয়া ব্যাপারে কিছু কথা বলবো। গত কয়েক দিন অনেক কথাই গণ মাধ্যমগুলোতে এসেছে। আমি মনে করি বাংলাদেশ দলের এবং আমার ভক্ত - সমর্থক সবারই পরিষ্কার ভাবে সব কিছু জানার অধিকার রাখে।’

এরপর দেশ ছাড়ার পর ১২ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন তামিম। সেখানে জানিয়েছেন তাকে নিয়ে ঘটে যাওয়া অনেক বিষয়।

শুরুতে নিজের অবসর ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ফিরে আসার বিষয় নিয়েও কথা বলেন। পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে রিহ্যাব ও ফিটনেস নিয়ে কথা বলেন তামিম, ‘আমি অবসর ভেঙে ফেরার পর দুইমাস প্রচন্ড কষ্ট করি নিজের ফিটনেস নিয়ে। আমি শিওর আমার ফিটনেস বিষয়ে যারা আমার সঙ্গে কাজ করেছে তারা সবাই ফিটনেস ট্রেনার, ফিজিও সবার আমার সঙ্গে একমত হবেন। এমন কোন সেশন নেই যে তারা আমাকে দিয়েছে কিন্তু আমি সেটা করিনি।’

সদ্য সমাপ্ত নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে মাঠে ফেরেন তামিম। ফেরার ম্যাচে ব্যাটিংয়ে সুযোগ না হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এই ইনিংস নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন তামিম। ইনিংসটি বেশ কনফিডেন্সের সঙ্গে খেলেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। ম্যাচ শেষে মানসিকভাবে এতোটাই চাঙা হয়েছিলেন যে গত চার মাস তার সঙ্গে যা ঘটেছে সব ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণার আগে প্রশ্ন ওঠে তামিম ইকবালের ফিটনেস নিয়ে। এবার ফিটনেস নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তামিম। একই সঙ্গে পাঁচটি ম্যাচ খেলাসহ আরও কিছু বিষয়ে কথা বলেন তামিম, ‘প্রথম ম্যাচের পর হালকা ব্যথা ছিল। দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার পর আমি আমার অবস্থান জানিয়েছি ফিজিওকে। ওই সময় তিনজন সিলেক্টর ড্রেসিং রুমে আসে। একটা জিনিস আমি ক্লিয়ার করতে চাই, আমি কখনও কাউকে বলিনি পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারব না। বিষয়টি নান্নু ভাইও (নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু) ক্লিয়ার করেছে গণমাধ্যমে। আমি জানি না এই কথাটা মিডিয়াকে কে বলেছে। এটা একদম মিথ্যা। তাদের যে জিনিসটা আমি বলেছিলাম যে, আমার শারীরিক অবস্থা এমনই থাকবে। আপনারা যখন টিম সিলেক্ট করবেন তখন এই বিষয়টি মাথায় রাখবেন। মূলত আমি তাদের এজন্যই বলেছিলাম, আমি যখন ফিটনেস ইস্যুতে অবসর নিই তখন কোচ, ফিজিওর সঙ্গে কথা হয়েছিল। সবাই এগ্রি হয়েছিল আমি প্রথম ম্যাচ খেলতে পারব। কিন্তু পরে কি হয়েছিল তা আপনারা দেখেছেন। মূলত এজন্যই এবার আমার অবস্থান জানিয়েছিলাম। কারণ, এমনও হতে পারে আমি বিশ্বকাপে নয়টি ম্যাচ খেলব। আসলে বিশ্বকাপের সূচি এমন ছিল প্রতিটি ম্যাচের আগে ৩/৪ দিনের একটা গ্যাপ। সবচেয়ে বড় কথা ফিজিওর রিপোর্ট কি ছিলো, এটা নিয়ে কথা হচ্ছে, কেউ চ্যালেঞ্জ করতে চাইলে করতে পারেন আমার সঙ্গে। রিপোর্টে বলা হয়েছিল প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচের পর আমার অবস্থান, এবং আমি ২৬ তারিখ ম্যাচের জন্য ফিট। কিন্তু তারা মনে করে আমি যদি বিশ্রাম নিই তাহলে সেটা ভালো হয়। তাহলে আমি বেশকয়েকদিন বিশ্রাম পাব এবং ম্যাচের আগে ১০ সপ্তাহের রিহ্যাবও হয়ে যাবে। আমি প্রথম ম্যাচটি খেলতে পারব। রিপোর্ট এটাই ছিল।’

এরপর মূল বিষয়টি ক্লিয়ার করেন তামিম। বোর্ডের শীর্ষ এক কর্মকর্তা তামিমকে ফোন করে জানায়, ‘তামিম তুমি তো বিশ্বকাপে যাচ্ছ। তোমাকে তো ম্যানেজ করিয়ে খেলাতে হবে। তুমি এক কাজ করো, প্রথম ম্যাচটা খেইলো না। তখন আমি বলি, ভাই এখনও তো ১২/১৩ দিন পর ম্যাচ। আমি তো ততদিনে ভাল কন্ডিশনে থাকবে। কি কারণে খেলব না? এরপর তিনি বলেন, তুমি যদি খেলো তাহলে তোমাকে নিচের দিকে খেলতে হবে।’

মূলত এরপরই বিশ্বকাপ না খেলার সিদ্ধান্ত নেন তামিম। এ বিষয়ে তামিম বলেন, ‘আপনারা তো জানেন আমি কোন মাইন্ডসেট থেকে এসেছি। হঠাৎ করে এসে একটা ভাল ইনিংস খেলেছি, আমি হ্যাপি ছিলাম। এর মধ্যে আবার এসব বিষয় আমার পক্ষে আসলে নেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি ১৭ বছর ধরে এক পজিশনে ব্যাটিং করছি, আমি কখনও ৩/৪ চারেও ব্যাটিং করিনি। স্বাভাবিকভাবেই কথাটা আমি ভালভাবে নিইনি। আমি একটু উত্তেজিত হয়ে গেছিলাম। আসলে কিছু ক্ষেত্রে আমাকে জোর করে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। এরপর আমি বলি, দেখেন আপনাদের যদি এমন চিন্তাভাবনা থাকে তাহলে আমাকে পাঠায়েন না। আমি এসব নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না।’

ভিডিও বার্তার শেষদিকে তামিম সকলের উদ্দেশে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করেন, ‘একটাই রিকোয়েষ্ট করব সবাইকে, ‘আমাকে মনে রাইখেন, ভুলে যাইয়েন না।’