কিউবার প্রেক্ষাপটে বিদায়ী ওবামা এবং ভবিষ্যতের ট্রাম্প
- Details
- by সাইফ বিন আইয়ুব
ওবামা প্রশাসনের আর মাত্র দু’দিন বাকি। দীর্ঘ আট বছর পর বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে অবসর নেবেন বারাক ওবামা। তবে এই আট বছরের ওবামা শাসনামলে বিশ্ব কী পেলো এবং ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদরা তাকে কীভাবে স্মরণ করবেন, তা মূল্যায়ণ করার সময় এখনও সম্ভবত আসেনি।
শুধু এটুকু বলা যায় যে, মি. বারাক ওবামা যখন যুক্তরাষ্ট্রের লাগাম তার হাতে নেন তখন আমেরিকার অবস্থা অতীত কালের যে কোনো সময়ের চেয়ে খারাপ ছিলো। উত্তরাধিকার সূত্রে আমেরিকাকে তিনি এমন দুটি যুদ্ধে জড়ানো অবস্থায় পেয়েছেন, যে দুটি যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিলো ভঙ্গুর প্রায়। দেশটির লাভজনক রিয়েল এস্টেট ব্যবসা তখন পুরোপুরি ধসে পড়েছে, প্রায় প্রত্যেকটি ব্যাংক দেউলে হওয়ার আশঙ্কায় প্রতিনিয়ত প্রহর গুনছিলো এবং প্রতিদিন কর্মহীন হয়ে পড়ছিলো হাজার হাজার মানুষ। আর ইরাক ও আফগানিস্তান –এই দুটি ব্যাটল গ্রাউন্ডে লড়াই করছিলো প্রায় দুই লক্ষ আমেরিকান সৈন্য।
মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে ছিলো রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস। পদে পদে তারা বাধা দিয়েছে বারাক ওবামাকে। শেষ পর্যন্ত ওবামার জন্মস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজেদেরকে রেসিস্ট হিসেবেই প্রমাণ করেছে তারা। এছাড়া জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার সময় মি. প্রেসিডেন্টকে ‘মিথ্যাবাদী’ ডাকও শুনতে হয়েছে।
তবে এতোকিছুর পরও নিরপেক্ষভাবে বলতে গেলে এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে, শত বাধা সত্ত্বেও ওবামা প্রশাসন তাদের লক্ষ্য থেকে এক চুলও সরে আসেনি। ফলে উত্তরাধিকার সূত্রে যে ‘দগদগে ক্ষতের’ মালিক হয়েছিলেন ওবামা, তা তিনি অনেকটাই সারিয়ে তোলেন শুধুমাত্র প্রথম চার বছরেই। একই সাথে যুদ্ধের ময়দানে থাকা সৈন্যদেরকেও নিজেদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে শুরু করেন।
আর বলা যায় এর ফলেই বিপুল জনসমর্থন নিয়ে বারাক ওবামা দ্বিতীয় বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং এটাই তাকে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে ‘স্বাভাবিক’ করার একটা সুযোগ এনে দেয়। ওই সব দেশগুলোর মাঝে কিউবাও ছিলো।
এই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর কিউবা-যুক্তরাষ্ট্র এক ঐতিহাসিক দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সংঘটিত হয়। যে আলোচনার ফলে দুই দেশই অর্ধ শতাব্দী ধরে চলে আসা ঘৃণার রাজনীতিকে পেছনে ফেলে কূটনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে।
বারাক ওবামা যখন কিউবা সফর করলেন তখন বেশির ভাগ লোকই তাকে এভাবে দেখতে প্রস্তুত ছিলো না। আড়ম্বর ও জৌলুশহীনভাবে ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল যখন হাভানার রাস্তায় রাস্তায় সাধারণ মানুষের সাথে ঘুরে বেড়ালেন তখন অনেকের চোখই কপালে উঠে গেছে। কিউবার সাধারণ মানুষ ওবামাকে নিজেদের একজন বলেই মনে করছিলো।
আর কিউবান সরকারও ওবামাকে স্বাধীনভাবে হাভানায় ঘুরে বেড়ানো এবং সবার সাথে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিলো। সরকারের ইচ্ছাতেই ওবামা কিউবার গ্র্যান্ড থিয়েটারে কিউবান জনগণের সামনে কথা বলার সুযোগ পান। এসবের মাধ্যমে কিছুটা হলেও অতীতের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন ওবামা।
এসবের মধ্যেই কিউবার কিংবদন্তি নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘ব্রাদার ওবামা’ বলে সম্বোধন করলেন। সম্ভবত এটুকুই যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু পরদিন সকালে কিউবার গণমাধ্যমের যে রূপ দেখা গেলো তা ছিলো অবিশ্বাস্য। কিউবার প্রতিটি পত্রিকা ওবামা এবং যুক্তরাষ্ট্রের গুনকীর্তন করে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ছাপালো। আমেরিকার মহানুভবতা বর্ণনায় খরচ করা হলো একগাদা কালি। যা ছিলো আত্মবিধ্বংসীও বটে।
১৯৫৯ সালে ফিদেল ক্যাস্ত্রো যখন তার প্রথম ভাষণটি দেন, তখন সম্ভত এই লোকদের ব্যাপারেই সাবধান করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রত্যেকটি সফল কাজের পর একদল লোকের আবির্ভাব হয়, যারা শেষ মুহূর্তে এসে সমস্ত কাজের ক্রেডিটটুকু নিয়ে নেয়। আমেরিকা-কিউবার দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পরও দুই দেশেই এমন কিছু সুবিধাবাদী লোকের আবির্ভাব ঘটলো, যারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সকল কাজের দায়িত্ব নিজের পকেটে পুরে নিলো।
এর ফলে যেটা ঘটলো তা হলো, কিউবার দুঃসময়ে যারা অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করেছে, যারা মিয়ামি স্ট্রিটে স্বশরীরে যুদ্ধ করেছে, আমেরিকার অবরোধের দিনগুলোতে যারা না খেয়ে পরিবার থেকে দূরে থেকে হুমকির মুখে সময় পার করেছে তারা এই সময়ে এসে ব্রাত্য হয়ে পড়লো। তাদেরকে কোনোরকম মূল্যায়ন করা হলো না।
সুবিধাবাদীদের কারণে আমেরিকা-কিউবার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক কাগজে-কলমে ঠিক থাকলেও বাস্তবে অনেকটাই খেই হারিয়ে ফেললো। চুক্তির প্রধান শর্তগুলোর বদলে গুরুত্বহীন শর্তগুলো সবার কাছে প্রাধান্য পেতে থাকলো। যেমন, কিউবার ইন্টারনেটের উন্নতি সাধন হলো, এখানে অনেক সেলিব্রেটিরা বেড়াতে আসতে লাগলো। কিন্তু কিউবায় ব্যবসায়িক বিনিয়োগের অন্যতম শর্তটি নিয়ে কোনো আলোচনাই হলো না। গুয়ান্তানামো নৌ ঘাঁটি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কেউ কোনো উচ্চ্যবাচ্যই করলো না। যদিও এই দুটি শর্ত বাস্তবায়নে ওবামার নিজেরও কোনো ক্ষমতা ছিলো না, পুরোটাই নির্ভর করছিলো কংগ্রেসের অনুমোদনের ওপর।
এসবের মধ্য দিয়েই আমেরিকা এখন ট্রাম্পযুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। অনিশ্চিত, অস্থির ও লক্ষ্যহীন ট্রাম্প কিউবার ব্যাপারটিকে কীভাবে দেখবেন সেটিও একটি প্রশ্নের বিষয়। এমনও তো হতে পারে, ট্রাম্প কিউবাকে আবার তার পূর্বসূরি জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন।
যদিও দেরি হয়ে গেছে, তবুও কিউবা এখনও আমেরিকার সাথে মিলিয়ন ডলারের যৌথ বিনিয়োগের ব্যাপারে চেষ্টা করে যেতে পারে। কারণ কিউবার যুদ্ধটা স্থবির অর্থনীতির বিরুদ্ধে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন হওয়াটাও কিউবার জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। একইসাথে মার্কিন নতুন প্রশাসনের সাথে একটি ভালো সম্পর্ক বজায় রাখাও এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এবং সম্ভবত এটা কিউবার ভবিষ্যতের জন্যই জরুরী।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.