শেষ বলে হারল পাকিস্তান, ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

সহজ জয়ের পথেই ছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু শেষ দিকে হঠাৎই পথ হারায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। ৪১তম ওভারে বোলিংয়ে এসে দারুণভাবেই পাকিস্তানকে লড়াইয়ে ফেরান শাহিন শাহ আফ্রিদি। পরপর দুই বলে নেন দুই উইকেট। জমে ওঠে ম্যাচ। জামান খানের শেষ ওভারে আট রানের সমীকরণ লঙ্কানদের সামনে। দুই বলে সেটি দাঁড়ায় ছয় রানে। ওভারের পঞ্চম বলে চার হাঁকান চারিথ আসালাঙ্কা।

এশিয়া কাপের অলিখিত সেমিফাইনালে থ্রিলার লড়াই উপহার দেয় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা

থ্রিলার ম্যাচে শেষ বলে দুই রান নিয়ে লঙ্কানদের মহানাটকীয় জয় উপহার দেন আসালাঙ্কা। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এশিয়া কাপের ফাইনালে ‍উঠল তারা। বিস্ময়কর হচ্ছে, নির্ধারিত ৪২ ওভারে দুই দলই করে ২৫২ রান। কিন্তু ডাক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে লঙ্কানদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৫২ রানই। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে শেষ বলে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা (২৫২/৮)।

অবশ্য শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠবে; এটা যেন এক প্রকার নিয়ম হয়ে উঠেছে। ১৬ আসরের মধ্যে রেকর্ড (সর্বোচ্চ) ১৩বারের মতো টুর্নামেন্টের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের টিকিট কাটল লঙ্কানরা। এবারও তারা ভেঙেছে পাকিস্তানের স্বপ্ন। আজ বৃহস্পতিবার কলম্বোতে বৃষ্টিভেজা ম্যাচে বাবর আজমদের দুই উইকেটে হারিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। আগামী রোববার একই ভেন্যুতে ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ভারত

যথারীতি এদিনও ম্যাচে দফায় দফায় বাগড়া দেয় বৃষ্টি। তাতে করে কমে আসে ম্যাচের দৈর্ঘ্য। যেখানে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৪২ ওভারে সাত উইকেটে ২৫২ রানের শক্তিশালী সংগ্রহ তোলে পাকিস্তান। জবাবে শেষ বলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। টানা দুই হারে এবারের আসর থেকে বিদায় নিলো পাকিস্তান। গত বছর এই দলটাকে হারিয়েই শিরোপা জিতেছিল লঙ্কানরা।

শ্রীলঙ্কার রান তাড়ার মূল কাজটা করে দিয়েছেন টপ অর্ডার ব্যাটাররা। আরেকটু ছোট করে বললে কুশল মেন্ডিস। তার ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সুবাদে আস্কিং রেটের চাপ অনেকটাই কমে আসে লঙ্কানদের। ৭৭ রানে দুই উইকেট হারানোর পর সাদিরা সামারাবিক্রমাকে নিয়ে শত রানের জুটি গড়েন মেন্ডিস। তখন প্রায় ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন বাবররা। কিন্তু দলটা ‘আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান’ পাকিস্তান বলে শেষ দিকে লুকিয়ে ছিল জমজমাট লড়াইয়ের রসদ।

৫১ বলে ৪৮ রানে আউট হন সামারাবিক্রমা। তবে সেঞ্চুরির আভাস দিয়ে আউট হয়ে যান মেন্ডিস; হাতছাড়া করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক। ৮৭ বলে ৯১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। অধিনায়ক দাসুন শানাকা এলেন আর গেলেন। কিছুটা চাপে পড়ে লঙ্কানরা। ওভার প্রতি গড়ে ছয় রানের সমীকরণ দাঁড়ায় তাদের সামনে। শেষ পর্যন্ত লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে ম্যাচ জেতান আসালাঙ্কা। তিনি হয়ে উঠলেন শেষের নায়ক।

শেষ দুই ওভারে ১২ রান দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। আসালাঙ্কা ৪৭ বলে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন। এ ছাড়া পাথুম নিসাঙ্কা ৪৪ বলে ২৯ রানে আউট হন। আরেক ওপেনার কুশল পেরেরা আট বলে ১৭ রানে বিদায় নেন। পাকিস্তানের পক্ষে তিনটি উইকেট নেন ইফতিখার আহমেদ। দুটি শিকার আফ্রিদির। আর শাদাব খান পেয়েছেন এক উইকেট।

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় পাকিস্তান। দলীয় নয় রানে তারা হারায় ওপেনার ফখর জামানের উইকেট। ধাক্কা সামাল দেন অধিনায়ক বাবর আজম ও আব্দুল্লাহ শফিক। ৬৪ রানে ভাঙে জুটি। ৩৫ বলে ২৯ রানে ফেরেন বাবর। দলীয় শতক স্পর্শ করতেই তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে বিদায় নিলেন শফিকও।

৬৯ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেন পাকিস্তানি ওপেনার। মোহাম্মদ হ্যারিস রউফ ও মোহাম্মদ নওয়াজ ফেরেন দ্রুতই। ১৩০ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে পাকিস্তান। ষষ্ঠ উইকেটে ১০৮ রানের জুটিতে বিপর্যয় সামলে ওঠে পাকিস্তান। জুটিতে নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৪০ বলে ৪৭ রান করেন ইফতিখার আহমেদ।

কিন্তু রিজওয়ানকে আউট করা যায়নি। ৭৩ বলে ৮৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ঝোড়ো ইনিংসের ওপর দাঁড়িয়ে দলীয় সংগ্রহ আড়াই শ’ ছাড়ায় পাকিস্তান। লঙ্কানদের পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন মাথিসা পাতিরানা। দুটি শিকার প্রমদ মদুশানের। একটি করে উইকেট পান মহেশ থিকসানা ও দুনিথ ওয়েলালাগে।