আনু মুহাম্মদ: ৯৯ ভাগ মানুষ রামপাল প্রকল্পের বিপক্ষে

বেশ কিছুদিন ধরে দেশব্যাপী আলোচিত ইস্যু পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের নিকটবর্তী রামপালে বৈদ্যুতিক প্রকল্প স্থাপন। শুরু থেকেই দেশে-বিদেশের পরিবেশবাদীরা রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের বিরোধীতা করলেও সরকার রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের ব্যাপারে অনড় রয়েছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, দেশের শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের বিপক্ষে।

দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসা তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, 'রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। দেশের মানুষকে কোন ধরনের ভয় দেখানো না হলে, দমন-পীড়ন না করলে, হয়রানি করা না হলে শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে মত দেবে। এই প্রকল্প সুন্দরবন ধ্বংসের প্রকল্প। সরকার দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের মতকে উপেক্ষা করতে পারে না।'

৭ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে রাজধানী ঢাকা জাতীয় জাদুঘরের সামনে সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের এক অংশ হিসেবে আয়োজিত সমাবেশে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। সমাবেশটির আয়োজন করে 'সর্বপ্রাণ সাংস্কৃতিক শক্তি'। আনু মুহাম্মদ বলেন, 'বিশ্বের সমস্ত লুটেরা, কোটিপতি কিংবা মুনাফা লোভী, কমিশন ভোগীরা সব এক, তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপনে ৭ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শনিবার রামপাল প্রকল্প বিরোধী এই প্রতিবাদ সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কলকাতা, নয়াদিল্লিতে, লন্ডন, মেলবোর্নে,প্যারিসে, জার্মানি, ইতালিসহ উত্তর আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সুন্দরবন বিনাশী এই প্রকল্প বন্ধ করতে সারাবিশ্ব আজ জেগে উঠেছে।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, 'পৃথিবী কোনো রাষ্ট্রের সীমানা দ্বারা ভাগ করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর এক প্রান্তে বায়ু দূষণ হলে, নদী-পানি দূষণ হলে, বন-বন্যপ্রাণী উজাড় হলে অন্য প্রান্তের জনজীবন বিপদগ্রস্ত হয়। নিজেদের বাঁচার তাগিদে হলেও বিশ্বের যেকোনো শহরে উন্নয়নের নামে প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংস হলে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বন-পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।'

প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন খুশি কবীর, শিল্পী কফিল আহমেদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় নেতা রুহীন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকীসহ আরো অনেকে।

এই প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ঘোষিত হয় নতুন কর্মসূচি। সমাবেশ থেকে জানানো হয়, আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবন ধ্বংসী প্রকল্প বাতিল না হলে ২৬ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরীতে অর্ধবেল হরতাল পালন করা হবে। অর্থাৎ ওইদিন ভোর ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত গাড়ির চাকা ঘুরবে না, দোকানপাট খুলবে না। দেশের স্বার্থে সাধারণ ছয় ঘণ্টার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি এবং যাবতীয় কাজ বন্ধ রেখে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।