অবশেষে দেখা মিলেছে শীতের

কিছুদিন ধরে ঘুমোতে যাওয়া আগে শিশিরকে একটি বিষয় নিয়ে প্রতিদিনই একাধিকবার ভাবতে হচ্ছে, ‘কম্বলটা কি আজ রাতে প্রয়োজন?’, শিশির কম্বল গায়ে দেয়, কিছুক্ষণ পর তার অস্বস্থি বোধ হয়। তারপর কম্বল সরিয়ে রাখে, তাতে করে আবার শীত শীত লাগে। সকালে বাইরে যাওয়ার সময়ও একই বিপত্তি। সোয়েটার পরে বাইরে গেলে গরম লাগে। আবার সোয়েটার ছাড়াও চলে না।

বিষয়টা কী?

এবারের শীতটা এভাবেই এসেছে আর গিয়েছে। ডিসেম্বর চলে গেলেও সারা দেশে শীত ছিল একরকম ভ্রান্তির মতো। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে শীতের বুড়ির যেন ঘুম ভেঙ্গেছে। একটু একটু করে বাড়ছে ঠান্ডা বাতাস।

ছয় ঋতুর এই দেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে শীত জমে বসে। কিন্তু পুরো ডিসেম্বর এবার শীতের কোন দেখা ছিল না। দেশের উত্তরাঞ্চলে খানিকটা শীত পড়লেও রাজধানীতে তার নামগন্ধও ছিল না। ফলে রাস্তার পাশে পিঠার দোকান, বাজারে শীতের পোশাক, বাসে বাসে মোজা নিয়ে হকারের হাকডাক জমে উঠছিল না মোটেও।

সমস্যাটা কোথায়?

অন্যান্যবার বছরের শুরুর এই সময়টাতে দেশের প্রায় সব জায়গায় রীতিমতো শৈতপ্রবাহ চলে। বাতাসের তাপমাত্রা অঞ্চলভেদে ৪ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে অবস্থান করে। কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এবার শীতের হাবভাব মোটেও স্বাভাবিক না। দেশের কোন অঞ্চলে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়নি।

ওয়ার্ল্ড ম্যাটিওরোলজিরক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) ২০১৬ সালকে উষ্ণতম বছর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, বিশ্বব্যাপী উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শীত পড়তে অনিয়ম হচ্ছে।

শীত কী এবার পড়লো তবে?

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তিন মাস মেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, জানুয়ারির শুরুর দিকে মৃদু থেকে মাঝারি পর্যায়ের শৈতপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। সে অনুযায়ী কয়েকদিন থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে মৃদু শৈতপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। হিমালয়ের কাছে দেশের পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন জানান, টানা কয়েকদিন এই শীত থাকবে। আগামী ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিনই কম বেশি বাড়তে থাকবে শীত। আজ ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। এই তাপমাত্রা আরো কমবে। উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিক থেকে আসা হিমালয়ের ঠান্ডা বাতাসের গতিবেগ ১২ থেকে ১৭ কিলোমিটারে ওঠানামা করবে। তারপর আবার আবহাওয়া পরিবর্তন হবে।’

শীত পড়েছে; আনন্দ নাকি যন্ত্রণা!

প্রতিবছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং শীতার্তদের সাহায্যের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়। কিন্তু এবছর শীত আসতে অনিয়ম হওয়ায় এধরণের উদ্যোগেও ছিল বেশ কমতি। কিন্তু হঠাৎই শীত হামলে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন পথে থাকা হতদরিদ্র মানুষগুলো। এখান-ওখান থেকে শুকনো পাতা, গাছের ডাল কুঁড়িয়ে এনে আগুন জ্বালাচ্ছেন আর হয়তো ভাগ্যকেই দুষছেন দিন-রাত। শ্রমিক শ্রেনির এসব মানুষের কাছে শীত মানেই যেন চরম দুর্দিন।

কী করণীয়!

সামর্থ অনুযায়ী শীতার্তদের সহায়তা করুন, হোক সে সাংগঠনিক বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে। আপনার ছোট একটি উদ্যোগ, এই শীতে অন্তত একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে। মানবিকতার সঙ্গে ওদের পাশে দাঁড়ান।