বাংলাদেশের বিদায়, বিফলে গেল হৃদয়ের লড়াই

ওয়ানডে সংস্করণে আড়াই শ’র বেশি রান তাড়া করে জেতা সহজ নয়। সেটা কিছুটা কঠিন করে হয়ে উঠল স্পোর্টিং উইকেটে। কঠিন লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। জাগিয়েছিল আশা। কিন্তু দুই দফা ব্যাটিংয়ে বিপর্যয়ের পর ম্যাচটাই হেরে বসল টাইগাররা। বৃথাই গেল তাওহিদ হৃদয়ের দুর্দান্ত ইনিংসটা।

৮২ রানের ‍দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন তাওহিদ হৃদয়

আজ কলম্বোতে বাঁচা-মরার ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে কোনোরকম অলআউট এড়িয়েছে লঙ্কানরা। নির্ধারিত ওভারে নয় উইকেটে ২৫৭ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ তোলে তারা। জবাবে ম্যাচের ১১ বল বাকি থাকতে ২৩৬ রানে গুটিয়ে গেছে সাকিব আল হাসানের দল।

এই হারে কার্যত শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের এশিয়া কাপ স্বপ্ন। যদি, কিন্তু তথাপির ওপর দাঁড়িয়ে আছে টাইগারদের ফাইনাল ভাগ্য। সমীকরণটাও অলৌকিক। স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে সাকিবদের জিততে হবে বড় ব্যবধানে। শুধু তাই নয়, নানা সমীকরণ থাকতে হবে অনুকূলে। যদিও এমন কিছুর আশা না করাই ভালো। কারণ, বাংলাদেশ স্রেফ গাণিতিক হিসেবেই টিকে আছে টুর্নামেন্টে।

রান তাড়ায় বাংলাদেশ বিনা উইকেটে যোগ করে ৫৫ রান। এমন একটা দারুণ শুরুর পরও দল পথ হারায়। ৮৩ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে বসে টাইগাররা। এ সময়ে সাজঘরে ফিরে যান মোহাম্মদ নাইম শেখ, মেহেদি হাসান মিরাজ, লিটন দাস ও অধিনায়ক সাকিব। ৪৬ বলে ২১ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার নাইম।

২৯ বলে ২৮ রান এসেছে মেকশিফট ওপেনার মিরাজের ব্যাট থেকে। ২৪ বলে ১৫ রানে ফেরেন লিটন। শেষ দিকে নাসুম আহমেদ ও হাসান মাহমুদ কিছুটা লড়াই করেন। অবিশ্বাস্য কিছুর ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন তারা। সমীকরণ ১২ বলে ২২ রান নামিয়ে এনেছিলেন দুজন। যদিও সেটি। ১৫ বলে ১৫ রানে আউট হয়ে যান নাসুম। সাত বলে ১০ রানে অজেয় থাকেন হাসান।

মাঝের সময়টুকু বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখেন মুশফিকুর রহিম ও হৃদয়। প্রাথমিক বিপর্যয়ের পর পঞ্চম উইকেট জুটিতে হাল ধরেন তারা। তাদের ৭২ রানের জুটি বিচ্ছিন্ন হয় মুশির বিদায়ে। ৪৮ বলে ২৯ রান রান করেন তিনি। তবু আশা দেখাচ্ছিলেন হৃদয়। কিন্তু দলীয় সংগ্রহ দুশো ছোঁয়ার আগে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে ফিরে আসেন হৃদয়।

৯৭ বলে ৮২ রানে আউট হন হৃদয়। মহেশ থিকাসানার বলে এলবির ফাঁদে পড়েন তিনি। অবশ্য রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। তবে আম্পায়ার চাইলে হৃদয়কে আউট না দিলেও পারতেন। ম্যাচটা শেষ হয়ে গেছে ওখানেই। মূলত একদিকে আস্কিং রেটের চাপ, অন্যদিকে দ্রুতগতিতে রান তোলার তাড়না। এই দুই চাপেই শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশ। লঙ্কানদের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নেন মাথিশা পাতিরানা, থিকসানা ও অধিনায়ক দাসুন সানাকা।

এর আগে ব্যাটিংয়ে ভালো সূচনা পেয়েছিল শ্রীলঙ্কাও। ৩৪ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙলেও সমস্যা হয়নি তাদের। দুই ওপেনারকে বিচ্ছিন্ন করেন হাসান মাহমুদ। ১৭ বলে ১৮ রানে বিদায় নেন দিমুথ করুনারত্নে। ২৪তম ভারে দলীয় ১০৮ রানে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার নিসাঙ্কা। ৬০ বলে ৪০ রানে আউট হন তিনি।

পাথুম নিসাঙ্কার শিকারি শরিফুল ইসলাম। এরপর নিয়মিত বিরতি দিয়ে উইকেট নিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। উইকেটের রাশ টেনে ধরতে গিয়ে কমে যায় লঙ্কানদের রানের গতি। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে লঙ্কানদের শক্তিশালী সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান সাদিরা সামারবিক্রমা। তাকে যোগ্য সঙ্গটাই দিয়েছেন মেন্ডিস। ৭৩ বলে ৫০ রান করেন তিনি।

৭২ বলে ৯৩ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন সাদিরা। গ্রুপপর্বের ম্যাচেও বাংলাদেশকে ভুগিয়েছিলেন এই ব্যাটার। করেছিলেন ফিফটি। ৩২ বলে ২৪ রানে ফেরেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা। ২৩ বলে ১০ রান এসেছে চারিথ আসালাঙ্কার ব্যাট থেকে। বাংলাদেশের পক্ষে সমান তিনটি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ। শরিফুলের শিকার দুটি। উইকেটশূন্য থাকলেও ১০ ওভারে স্রেফ ৩১ রান দিয়েছেন নাসুম।

বোলাররা লক্ষ্যমাত্রা নাগালে রাখতে পারেননি। মন্থর হয়ে যাওয়া উইকেটে স্বপ্ন বাঁচাতে পারেননি ব্যাটাররাও। আরও একটা ম্যাচ হারতে হলো ব্যাটিং ব্যর্থতায়। বাংলাদেশকে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখার আশা বাঁচিয়ে রাখল শ্রীলঙ্কা।