'শুধু ফেলানীকে নয় বাংলাদেশকেই কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রেখেছে ভারত'

মাঝেমধ্যেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে সীমান্তে প্রাণ হারায় বাংলাদেশি নাগরিকরা। নিহতের ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে কয়েকদফা পতাকা বৈঠকও হয় নিয়মিত। কিন্তু সীমান্তে প্রাণ হারানোর স্থায়ী কোন সমাধান আজও হয়নি। সীমান্ত হত্যার আলোচিত চরিত্রের নাম ফেলানি। স্কুল শিক্ষার্থীর নিথর দেহটি কাঁটাতারে ঝুলে থাকার দৃশ্যটি সত্যিই করুণ। আগামীকাল ৭ জানুয়ারি। ছয় বছর আগে এই দিনই কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয় ফেলানিকে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, 'সীমান্তে অনবরত গুলি চালাচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। শুধু ফেলানীকে নয় পুরো বাংলাদেশকেই কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রেখেছে ভারত।'

৬ জানুয়ারি, শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে '৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস' পালনের দাবি এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমান হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি। মানববন্ধনটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি এবং মানবাধিকার জোট। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, 'ফেলানি হত্যার ৬ বছর হয়ে গেলেও কোনো ওয়াদাই রাখেনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), হয়নি সুষ্ঠু বিচার।'

গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, 'সীমান্তে ওদের গুলি থামাতে হবে। ভারত এমন নির্মমভাবে শুধু ফেলানিকে নয় বরং বাংলাদেশকেই ঝুলিয়েছে। ভারতীয়রা নববর্ষ, ঈদসহ বিভিন্ন দিবসে সীমান্তে পাখির মতো মানুষকে গুলি করে। এভাবে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডে মেতে ওঠে বিএসএফ এ দেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়েছে। ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক কোনো আলোচনাতে সামান্য অর্জন পায়নি সরকার। নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড ঘটছে সীমান্তে অথচ সরকার মুখে আঙ্গুল দিয়ে আছে।

মানববন্ধনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) মহাসচিব এডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, গণসংস্কৃতি দলের সভাপতি এস আল মামুন, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারী, এনডিপি যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ ফরিদউদ্দিন, স্বাধীনতা ফোরামের সহ-সভাপতি এম. ইলিয়াস আলী, মানবাধিকার জোটের মহাসচিব মিলন মল্লিক, তৃণমূল নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি মুহাম্মদ মফিজুর রহমান লিটন, বাংলাদেশ লেবার মুভমেন্টের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন মাল, অপরাজেয় বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনসহ আরো অনেকে। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা।

গোলাম মোস্তফা আরো বলেন, 'ফেলানিকে হারানোর ছয় বছর হলো। কিন্তু বিচারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমরা পুরোপুরি ব্যর্থ। আমি প্রস্তাব করছি ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের সামনের সড়কটির নাম হোক ফেলানি রোড। 

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) মহাসচিব এডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী বলেন, 'সরকার ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের জন্য ট্রানজিট-করিডোর সবকিছুই দিয়েছে, এখনো নানাকিছু দেয়ার মধ্যেই আছে। প্রকৃতপক্ষে বন্ধু ভারতের দেখা কোনদিন পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের কাছ থেকে শুধু সুবিধা নেবে ভারত।'

সভাপতির বক্তব্যে মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, 'বছরের পর বছর সীমান্তে বাঙালিরা প্রাণ হারাচ্ছেন। কিন্তু ভারত তার আগ্রাসী মনোভাব থেকে পেছনে আসেনি। আমরা মনে করি দেশের জাতীয় স্বার্থে সরকারের উচিত সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।'

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারির ভোরে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী সীমান্তের কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা করেন ফেলানি। এসময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানিকে লক্ষ্য করে নির্মমভাবে গুলি করে। প্রায় চার ঘণ্টা কাঁটাতারেই প্রাণ নিয়ে ঝুলে ছিলেন ফেলানি। শেষ পর্যন্ত কাঁটাতারে ঝুলন্ত থাকা অবস্থাতেই মারা যায় সে। মূলত মা-বাবার সঙ্গে ভারতের ভূখণ্ডে ইটভাটায় কাজ করতে গিয়েছিল ফেলানি। ফেরার পথে এই মর্মান্তিক দুঘর্টনা ঘটে।