আপনি পড়ছেন

ভ্লাদিমির পুতিন গত বছর ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লা রপ্তানি বন্ধ করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল। তবে পারমাণবিক জ্বালানির ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে। কেননা রুশ নিয়ন্ত্রিত রোসাটম কর্পোরেশন এখনও বিশ্বের পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রগুলোর জন্য জ্বালানির প্রধান উৎস হিসাবে রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের চাহিদার প্রায় অর্ধেক সরবরাহ করে থাকে রোসাটম। জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিপর্যয়ের পর ইউরোপজুড়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের হিড়িক উঠেছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জ্বালানির কথা চিন্তা করে নতুন করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পুনর্গঠন করা হচ্ছে। তবে এর অগ্রগতি অত্যন্ত ধীরে হচ্ছে।

nuclear fuelপারমাণবিক জ্বালানি

পারমাণবিক কেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় প্রাকৃতিকভাবে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইউরেনিয়াম। ইউরেনিয়াম আকরিককে চুল্লিতে ব্যবহার করার আগে একটি বিশাল শিল্প প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। উপাদানটি খনি থেকে উত্তোলন, নিষ্কাশন করার পর একটি গ্যাসীয় আকারে রূপান্তর করতে হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ইউরেনিয়াম দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়। এছাড়া তেজস্ক্রিয় এই পদার্থ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। এজন্য পারমাণবিক জ্বালানি চক্রের সঠিক বিবরণ মানবজাতির সবচেয়ে সুরক্ষিত গোপনীয়তাগুলোর মধ্যে একটি। 

পারমাণবিক ব্যবসার ক্ষেত্রে পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর মতো নয় রাশিয়ার রোসাটম কর্পোরেশন। এটি আকরিক নিষ্কাশন থেকে জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ এবং বিতরণ পর্যন্ত সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রতিটি অংশে জড়িত। কোম্পানিটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ২০১১ সালে ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর যখন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা পারমাণবিক শক্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন ফ্রান্সের আরেভা এসএ, ইউএস এনরিচমেন্ট কোম্পানি এবং ওয়েস্টিংহাউস ইলেকট্রিক কোম্পানিসহ জ্বালানি চক্রের সঙ্গে জড়িত কিছু পশ্চিমা কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়। 

এ রকম একটি সময়ে রাশিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করেনি বরং এতে বিনিয়োগ করেছে। দেশটি বিদ্যমান পারমাণবিক চুল্লিগুলোর পাশাপাশি নতুন বিদেশি প্রকল্পগুলোতেও অর্থায়ন করেছে। বর্তমানে রোসাটম এর ৩ লাখ ৩০ হাজার কর্মী পূর্ব ইউরোপ এবং রাশিয়ার বেশ কয়েকটি পুরোনো চুল্লিতে জ্বালানি সরবরাহ করছে। এছাড়া চীন ও ভারতসহ ১০টি দেশে ৩৩টি নতুন পাওয়ার ইউনিট তৈরি করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। আগামী কয়েক দশক ধরে এই জ্বালানি চুক্তিগুলো বহাল থাকবে।

পূর্ব ইউরোপের সাবেক সোভিয়েত প্রভাবাধীন দেশগুলোতে শীতল যুদ্ধের যুগে নির্মিত কয়েক ডজন ভিভিইআর চাপযুক্ত জল চুল্লি দ্বারা কাজ চালানো হচ্ছে। পুরোনো এই ইউনিটগুলোর বেশিরভাগই রোসাটম কর্পোরেশনের জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ফলে নতুন কোম্পানিগুলোর এই বাজারে প্রবেশ করতে এবং রাশিয়ান সরবরাহের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ কম। অবশ্য এক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম আছে। ওয়েস্টিংহাউস, ২০১৮ সালের দেউলিয়া অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পরে ইউক্রেনের কিছু ভিভিইআর চুল্লিতে জ্বালানি দেওয়ার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু ইউক্রেনও রোসাটম ইনভেন্টরির ওপর নির্ভর করে চলছে। এই দশকের শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার ওপর এই নির্ভরতা শেষ হবে না।  

বুলগেরিয়া থেকে চেক প্রজাতন্ত্র এবং ফিনল্যান্ডের জন্যও একই রকম চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। ফলে বিকল্প জ্বালানি সরবরাহকারীদের অনুসন্ধানে কয়েক বছর সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম চাহিদার প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ রাশিয়া সরবরাহ করে থাকে।  

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু রাশিয়া থেকে পারমাণবিক জ্বালানি কিনতে দ্বিধা করছে না দেশটি। শীতল যুদ্ধের পরে তথাকথিত মেগাটন থেকে মেগাওয়াট প্রোগ্রামের অধীনে রাশিয়ান অস্ত্র-গ্রেড ইউরেনিয়ামকে মার্কিন চুল্লিগুলোর জন্য উপযুক্ত জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। রাশিয়া এখনও যুক্তরাষ্ট্রে ইউরেনিয়াম সরবরাহকারী প্রধান দেশ হিসেবে রয়ে গেছে। মার্কিন সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে মার্কিন পারমাণবিক চুল্লিগুলোর জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের প্রায় এক চতুর্থাংশ সরবরাহ করেছিল রাশিয়া। রোসাটম বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হালেউ বা হাই-অ্যাসে-লো-এনরিচড ইউরেনিয়াম সরবরাহ করে। 

এদিকে পারমাণবিক জ্বালানির ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। পারমাণবিক জ্বালানি চক্র পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতি অভূতপূর্ব সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা মার্চ মাসে যৌথভাবে নর্থ আমেরিকান ক্যাপাসিটি পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান এবং ফ্রান্স ভাগ করা সাপ্লাই চেইনের বিকাশের জন্য একটি পৃথক চুক্তি করেছে।  

মার্কিন কংগ্রেস নতুন সরবরাহকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য রাশিয়ান ইউরেনিয়াম আমদানি এবং বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ করে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যুগান্তকারী জলবায়ু এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি আইন গত বছর পাস হয়েছে। এর ফলে উন্নত চুল্লিগুলোর জন্য অভ্যন্তরীণ জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৭শ' মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। ইউরেনকো লিমিটেড এবং ওরানো এসএ সহ ইউরোপীয় জ্বালানি নির্মাতারাও রাশিয়ান সরবরাহকারীদের থেকে গ্রাহকদের দূরে রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নতুন ক্যাপাসিটিতে বিনিয়োগ করছে। 

ইউক্রেন আক্রমণের পর রোসাটম এক পঞ্চমাংশেরও বেশি পারমাণবিক জ্বালানি রপ্তানি করেছে। এছাড়া উদীয়মান বাজারে পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ করার জন্য নতুন চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জুন মাসে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে বলেছিল,পশ্চিমা দেশগুলো যতই পদক্ষেপ নিক না কেন কোনও একক জাতি তার ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না।

সূত্র: ব্লুমবার্গ

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.