এই জনভোগান্তির দায় কার?
- Details
- by ডা. পলাশ বসু
শুরুতেই বলে নেওয়া ভালো যে, বর্তমান সময় বিবেচনায় নিয়ে জ্বর হলেই আমাদের ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে এবং সেটা দ্রুতই করানো উচিত। কারণ দেরি করলে ডেঙ্গু এন্টিজেন টেস্ট (যা ডেঙ্গু NS1 নামে পরিচিত) তা পজিটিভ নাও হতে পারে। আমরা জানি, ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে।
২০০০ সালে প্রথম যখন ঢাকাতে ডেঙ্গু ধরা পড়ে তখন দেশব্যাপী বেশ হইচই শুরু হয়। তারপরে কেটে গেছে প্রায় ২৩ বছর। সময়ের হিসেবে প্রায় সিকি শতাব্দী! নেহাতই কম সময় নয়। এত বছর পরে এসে তাই মনে প্রশ্ন জাগছে, আমরা এই রোগের বিস্তাররোধে কেন সফল হতে পারলাম না?
উত্তর যে অজানা; বিষয়টা তেমনও নয়। আসলে আমরা ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয়, টেকসই এবং সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি। যতটুকু যা নিয়েছি তা আপতকালীন সময়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় নিয়ে নিয়েছি। দীর্ঘমেয়াদি, টেকসই কোনো কাজ করিনি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ডেঙ্গু এখন আর শুধু ঢাকাতেই নয়; বরং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এ বছর ১২ আগস্ট অবধি মারা গেছেন ৩৮৭ জন। ২০১৯ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়।
প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে সংক্রামক ব্যাধি বিস্তারের ধরণ এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে তা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার যে বৈজ্ঞানিক তথ্য আমরা দেখতে পাই সেটাই এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। ফলে এটা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে যে, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণজনিত ব্যর্থতার খেসারতেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। ফলতঃ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে মৃত্যুর হারও তত বাড়বে। খুবই সরল হিসাব এটা। এ বছরের পরিসংখ্যানগত যে তথ্য আমরা পাচ্ছি তা মূলত মশা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের যথাযথ কর্মপরিকল্পনা না নেওয়ার ফলেই হচ্ছে।
পত্রিকান্তরে আমরা জানতে পারছি এ অবধি প্রায় ৮২ হাজারে বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এ সংখ্যা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ঢাকা শহরের হাসপাতালগুলোতে রোগীর উপচেপড়া ভিড়। ঢাকার বাইরেও সম্প্রতি রোগী বাড়ছে ব্যাপক হারে। অনেকেই চিকিৎসা নিতে ঢাকাতে ছুটছেন। চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতাল প্রশাসনের এই চাপ সামলাতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা শুরু হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে রোগীর সংখ্যা যখন আরও বাড়বে তখন অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভাবা যায়! ফলে ধরেই নেওয়া যায় সামনের দিনগুলোতে রোগী ও মৃত্যুর হারও বাড়বে। এতে করে উত্তেজিত রোগীর স্বজনরা যথাযথ চিকিৎসা না দেওয়ায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে চিকিসক লাঞ্ছনাসহ হাসপাতালগুলোতে অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এটা মাথায় রেখে অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। না হলে চিকিৎসা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে। সম্প্রতি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমন অবস্থা কিন্তু ঘটেছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাওয়া যেমন রোগীর অধিকার সেটা মাথায় রেখে চিকিৎসক সুরক্ষা এবং তাদের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এটা গেল একদিক। অন্যদিকে বেশ কয়েকদিন ধরেই প্রয়োজনীয় স্যালাইনের সংকট শুরু হয়ে গিয়েছে। দামও অস্বাভাবিক বেড়েছে। যথাযথ সময়ে যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে স্যালাইন না দেওয়া যায় তাহলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে বাধ্য। এর জন্য দায়ী কারা? যারা দায়ী তারা কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে। যত ধরনের অরাজকতা তা কিন্তু হবে হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোকে ঘিরে; যেটা আগেই উল্লেখ করেছি।
স্যালাইন উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের এখন সক্ষমতার সবটুকু দিয়ে বেশি বেশি স্যালাইন তৈরি এবং তা বাজারজাত করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। সেটাতে কি কোনো ঘাটতি আছে?
সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়কে বলতে শুনলাম যে, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে স্যালাইন আমদানি করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় আমাদের দেশে যেসব কোম্পানি স্যালাইন উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত তারা কি প্রযোজনীয় এই চাহিদা মেটাতে সক্ষম না? নাকি এই সংকটকে পুঁজি করে টাকা কামিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন? সেটা কি খতিয়ে দেখা হয়েছে? নাকি হচ্ছে? নাকি এখানেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম দেখতে পাচ্ছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর কি কারও জানা আছে?
সবশেষে একটাই কথা বলব- সংক্রামক ব্যাধিকে সবসময় প্রতিরোধ করতে হয়। ছুটতে হয় রোগের আগে আগে। পেছনে পড়লেই সর্বনাশ হয়ে যায়। ডেঙ্গুর আজ যে ভয়াবহতা আমরা দেখতে পাচ্ছি তা মূলত তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত ব্যর্থতার জন্যই হয়েছে। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে জনগণকে। ফলে ডেঙ্গুর দেশব্যাপী বিস্তারের দায়, জনগণের ভোগান্তি, হাসপাতালে রোগীর অত্যধিক চাপ এবং সেই সঙ্গে মৃত্যুর দায় প্রথমত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কেই সবার আগে নিতে হবে। অথচ অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এত এত ভোগান্তি, দেশব্যাপী ডেঙ্গুর বিস্তার এবং মৃত্যুর দায়ভার নিয়ে ন্যূনতম দুঃখপ্রকাশের সৌজন্যতাটুকুও তারা দেখাচ্ছেন না! ভুল স্বীকার না করলে তাহলে শুধরাবেন কিভাবে?
ডা. পলাশ বসু
অধ্যাপক, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.