আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেড় যুগে পা রাখলেন সাকিব

ফুটবলার বাবার স্বপ্নকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেছে নিয়েছেন ক্রিকেটকে। স্বপ্ন দেখতেন একদিন মস্ত বড়ো ক্রিকেটার হবেন, জয় করবেন বিশ্বকে। সময়ের ব্যবধানে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে ছোট বেলায় দেখা সেই স্বপ্নের চূড়ায় পৌঁছেছেন, বনে গেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ক্রিকেটবিশ্ব তাকে চেনে সাকিব আল হাসান নামে।

সাকিব আল হাসান

জিম্বাবুয়ের হারারে স্পোর্টিং ক্লাব থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ২০০৬ থেকে ২০২৩ সাল, পাড়ি দিয়েছেন ১৭ বছর। পরিশ্রম, সাধনা ও ত্যাগে নিজেকে নিয়েছেন সেরাদের কাতারে। ক্রিকেটের ২২ গজে ব্যাটে-বলে গড়েছেন রেকর্ড, তৈরি করেছেন নতুন ইতিহাস।

১৭ বছরের ক্যারিয়ারে কতশত চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন। নিশ্চয়তা-অনিশ্চয়তার দোলাচলে এগিয়ে গিয়েছেন, কঠিন লক্ষ্যে ছুটে চলেছেন প্রতিনিয়ত। উত্থান-পতনের গল্পে নিজেকে আবিষ্কার করেছেন বিশ্বসেরা হিসেবে। ক্রিকেটবিশ্বে এখন লাল-সবুজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন মাগুরার সেই ছোট্ট ফয়সাল।

৬-ই আগস্ট, ২০০৬, মাত্র ১৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। নিজের অভিষেক ম্যাচে বল হাতে এলটন চিগুম্বুরাকে বোকা বানিয়ে পথচলা শুরু, এরপর ব্যাট হাতে ৩০ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া৷ টগবগে তরুণ সাকিবের শুরুটা হয়েছিল এমনি।

সেদিনের সাকিব এখন পরিণত। বিকেএসপির সেরা প্রতিভা থেকে হয়েছেন বিশ্বসেরা। সঙ্গী হয়েছেন ইয়ান বোথাম, জ্যাক ক্যালিস, স্যার গ্যারি সোবার্সদের মতো কিংবদন্তিদের নামের পাশে। কোথাও কোথাও ছাড়িয়ে গেছেন এদেরও। রেকর্ডকে করেছেন নিত্যদিনের সঙ্গী। ৩৪ বছর বয়সী সাকিব এখন যেন মাঠে নামেন রেকর্ড গড়তেই!

৭৫ নাম্বার জার্সিকে বানিয়ে দিয়েছেন আইকনিক। ফরম্যাট যাই হোক, অলরাউন্ডার সাকিব যেটি করেছেন সেটি অন্য কারো কাছে নিছকই স্বপ্ন। এই ধরুন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ হাজার রান ও ৬০০ উইকেটের কথা। ক্রিকেট ইতিহাসে কতশত অলরাউন্ডার এলো গেলো, কিন্তু সাকিবই একমাত্র অলরাউন্ডার যিনি এই এলিট ক্লাবের প্রথম সদস্য।

সাদা পোশাকের গল্পতেও লাল বলের মতোই রঙিন সাকিব। ৬৬ টেস্টে ৪ হাজার ৪৫৪ রান ও ২৩৩ উইকেট। সাকিবের চেয়ে কম ম্যাচ খেলে এমন কীর্তি নেই কারো। এবার বলাই যায়, নামটি সাকিব বলেই সম্ভব।

টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেটের কীর্তি গড়েছেন মাত্র চারজন বোলার, তাদের একজন সাকিব। প্রসঙ্গ যখন বোলার, তখনও অনন্য সাকিব। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের মাত্র চারজন বোলার ৯ বা তার বেশি দলের বিপক্ষে ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন, তাদের একজন সাকিব। এমন অসংখ্য রেকর্ডের সাথে যুক্ত সাকিবের নাম।

গল্প যদি বলি রঙিন পোশাকের, তখন ওয়ানডে ফরম্যাটেও রাজা সাকিব। ২০১৯ বিশ্বকাপের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। ব্যাটে-বলে সাকিব ধারণ করেছিলেন রূদ্ধমূর্তি! এক টুর্নামেন্টে ৫০০ রান ও ১০ উইকেটের এলিট ক্লাবেও সাকিবের সঙ্গী নেই কেউ। তেমনি বিশ্বকাপ ইতিহাসের একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে ১০০০ রান ও ৩০ উইকেটের এলিট ক্লাবে রয়েছে সাকিবের নাম। এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে ৪৬ উইকেট কিংবা এক মাঠে সর্বোচ্চ রান ও উইকেট, মিরপুর শেরে বাংলার ইতিহাস দেখলেই ভেসে উঠবে সাকিবের নাম।

তেমনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও সাকিবের মত কার্যকরী খেলোয়াড় খুব কমই পেয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। আন্তর্জাতিক টি-২০ তে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের রেকর্ড সাকিবেরই। এক ইনিংসে চার বা তারচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের রেকর্ডটাও তার। রয়েছে রান ও উইকেটের অন্যরকম ডাবলও। তেমনি বিশ্বের নানান প্রান্তে দাপিয়ে বেড়ানোর নজিরও রয়েছে সাকিবের।

তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৪ হাজার ৪৭ রান ও ৬৭৮ উইকেট। ব্যক্তিগত অর্জনে সাকিবের প্রাপ্তির গল্প বিশাল হলেও রয়েছে আক্ষেপ। পাওয়া, না-পাওয়ার গল্প সাকিব পেয়েছেন অনেক কিছুই। কখনও বিতর্কে জড়িয়েছেন আবার কখনও ইনজুরির জন্য ছিটকে গিয়েছেন মাঠের বাইরে। বারবারই ফিরেছেন নিজের সেরাটা দিয়ে। ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে এসে সাকিব চাইবেন এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে বড় শিরোপা জয়ের আক্ষেপ মেটাতে।